-জেপি মরগ্যানের বিশ্লেষকেরা মনে করেন যে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল ব্যতিরেকে ডলার দুর্বল হবে। ট্রাম্প বিজয়ী হলে, নর্দএফএক্স-এর বিশ্লেষকগণ পূর্বাভাস করছেন যে ডলারের পতন 10-15% পর্যন্ত হতে পারে। পক্ষান্তরে, হিলারী ক্লিনটন জিতলে, সমস্ত সূচকের ওঠানামা ± 5% পর্যন্ত হতে পারে।
-8ই নভেম্বরের আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আমেরিকার অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তন আনতে পারে এবং এর ফলস্বরূপ, পৃথিবীর অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় ডলারের ওঠানামার বিরাট পরিবর্তন হতে পারে। ব্লুমবার্গের মতে, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি পদের দুজন গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী, হিলারী ক্লিনটন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্ল্যাটফর্ম বাণিজ্যনীতির গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এর সাথে আরো বলা যায় যে জেপি মরগ্যান চেজের (এক অন্যতম বৃহত্তম ব্রোকার)বিশ্লেষকদের মতে, এই দুই প্রার্থীদের মধ্যে যেকোন একজনের জয়ের ফলে ওয়াশিংটন এবং তার সহযোগীদের মধ্যে অন্ততঃপক্ষে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার সৃষ্টি হবে, যদিও না সরাসরি বাণিজ্যিক লড়াই শুরু হয়ে যায়। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ডলার থেকে অন্যান্য মুদ্রার প্রতি পুনরায় এক ঝোঁকের আশঙ্কা থাকতে পারে।
-ডয়েস ব্যাংক, এইচএসবিসি এবং ক্রেডিট স্যুইসও একই মত পোষণ করছে। ক্রেডিট স্যুইসের নিউইয়র্ক শাখার এক অগ্রগণ্য দক্ষ কুশলী, এস.জালিনুসের মতে নির্বাচনের ঠিক পরে পরেই ডলারের মূল্য অবশ্যই কমতে থাকবে।
-ব্যাংক অফ্ আমেরিকা মেরিল লিঞ্চ বিশেষজ্ঞগণ ইউএসডি-জেপিওয়াই-এর (USDJPY) বিষয়ে একটি বিবৃতিতে আশঙ্কা করেছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ে জাপানী মুদ্রার উর্ধ্বগতির তুলনায় ডলারের মূল্য হ্রাস পাবে।
-জিবিপি-ইউএসডি-র (GBPUSD) পরিস্থিতি আরো জটীলঃ একদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU)থেকে গ্রেট ব্রিটেনের প্রস্থানের সাথে সম্পর্কিত বিশৃঙ্খলা, অন্যদিকে সমানভাবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের কারণে জড়িত এক অনিশ্চয়তার বাতাবরণ। মরগ্যান স্ট্যানলির ব্লিশেষণ হল এই যে ডলার পাউণ্ডকে পথ ছেড়ে দেবে এবং এই মুদ্রাজুড়ি উর্ধ্বগামী হবে।
-জেপি মরগ্যানের জন নরম্যাণ্ড বলেন, "নতুন রাষ্ট্রপতির অধীনে আমরা যে বাণিজ্যে অনেক মতবিরোধ হতে চলেছে সে বিষয়ে নিশ্চিত। ট্রাম্পের জয়ে সেগুলি প্রবল হবে এবং ক্লিনটনের জয়ে তা সহনীয় হবে।" আর্ন্তজাতিক ব্রোকারেজ সংস্থা নর্দএফএক্স-ও একই মত পোষণ করে। তাদের মতে, যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হন, তাহলে ইউরোর তুলনায় ডলারের 1000 পয়েন্টের বেশী পতন হতে পারে।
-নর্দএফএক্স-এর মুখ্য বিশ্লেষক জন গর্ডন বলেন, "যদি হিলারী ক্লিনটন জেতেন, অপেক্ষাকৃত কম অস্থিরতা হবার সম্ভাবনা আছে এবং তা ± 5%–এর বেশী হবে না। কিন্তু ইইউআর-ইউএসডির ক্ষেত্রে এই পাঁচ শতাংশ প্রায় 500 পয়েন্ট হবে।”
-জন গর্ডন আরো বলতে থাকেন, “একটু তাকিয়ে দেখা যাক, নির্বাচনের পর সাধারণতঃ কি হয়ে থাকে। 2000 সালে, রিপাব্লিকান জর্জ ডব্লু. বুশ বিজয়ী হয়েছিলেন যার ফলে ডলারের ভীষণভাবে নিম্নমুখী পতন হয়েছিল এবং সারা বছর ধরে ইউরোর তুলনায় প্রায় 5,300 পয়েন্ট খুইয়েছিল। পরবর্তী নির্বাচন 2004–এ হয়েছিল, এবং বুশ আবার জয়ী হয়েছিলেন। মনে হয়েছিল যে আর কোন পরিবর্তন হওয়া উচিত নয়, কিন্তু পক্ষান্তরে, এই জুড়ি নতুন নির্বাচনী প্রচার প্রতিশ্রুতির দ্বারা উত্সাহিত হয়ে সম্পূর্ণভাবে ঘুরে গিয়েছিল, এবং দুমাসের মধ্যে আমেরিকান মুদ্রা প্রায় 2000 পয়েন্ট উপরে উঠে গিয়েছিল। 2008-এর নির্বাচনে ডেমোক্রাট প্রার্থী বারাক ওবামা রাষ্ট্রপতি হলেন, ফলস্বরূপ, এই প্রবণতার আবার পরিবর্তন দেখা গিয়েছিলঃ ছয় সপ্তাহের মধ্যে ডলারের 2350 পয়েন্টের বেশী পতন হয়েছিল। 2012-এর নির্বাচনে ওবামার পুর্নবার মনোনয়নে আরো একবার এই অভিমুখের পরিবর্তন হয়েছিল এবং তিন মাসের কম সময়ে ডলারের মান ঝাঁকুনি দিয়ে আবার 1050 পয়েন্ট উর্ধ্বমুখী হয়েছিল।”
-নর্দএফএক্স-এর বিশেষজ্ঞ জোর দিয়ে বলেন, “এবং লক্ষ্য রাখুন, রিপাবলিকান বা ডেমোক্রাট, যেই বিজয়ী হোক না কেন, একটা সহসা লাফ সবসময়েই হয়েছে। আমি স্থির বিশ্বাসী যে এই নির্বাচনেও তার কোন ব্যতিক্রম হবে না। সবচেয়ে সম্ভাব্য অবস্থা হল যে নির্বাচন-পরবর্তী প্রবণতা আগের মতই 2-3 মাস ধরে চলবে যতক্ষণ না পর্যন্ত বিনিয়োগকারীগণ সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হতে পারেন যে নতুন রাষ্ট্রপতির কোন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিটি পালন করা হবে, আর কোনটাই বা কাগজেই নামমাত্র লিপিবদ্ধ থাকবে। ট্রেডারদের পক্ষে এটি একটা ভাল সময় কারণ এখনই ভাল অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকে।
-বর্তমানে, আমরা যে কেবলমাত্র মুদ্রা হারেরই এক শক্তিশালী ওঠানামা আশা করছি যে তাই নয়, শেয়ারবাজারের সূচকে এবং আমেরিকান সংস্থাগুলির শেয়ারেও তা হবে বলে মনে করছি, এবং এই ওঠানামা ভোট গণনার প্রাথমিক ফলাফলের খবর প্রকাশিত হবার প্রায় সাথে সাথেই শুরু হয়ে যাবে। এই পরিস্থিতিতে ট্রেডারগণ তাদের আর্থিক পরিসম্পদ খুব বিচক্ষণতার সাথে বন্টন করবেন এবং অবশ্যই সতর্ক থাকবেন যাতে এই নতুন লেনদেনের সুযোগের 100% সদ্ব্যবহার করতে তারা যেন ব্যর্থ না হন।
ফিরে যান ফিরে যান