প্রথমে গত সপ্তাহের ঘটনাবলির পর্যালোচনা:
- ইউরো/ইউএসডি. বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞের (60%) অনুমান অনুসারেই গত সপ্তাহের প্রথমার্ধে ডলার লাভজনক অবস্থায় ছিল, এটা মজবুতও হয়েছিল, এবং ইউরো/ইউএসডি জুটি 1.2050 সাপোর্টে গিয়ে পড়ে গেল। 12 মে বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাতে এই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, এপ্রিলে মুদ্রাস্ফীতি খুব উঁচুতে উঠেছে। এই খবরে শেয়ার বাজার জোর ধাক্কা খেয়েছে। উপভোক্তা মূল্য সূচক 0.8 শতাংশে গিয়ে উঠেছে। যা কিনা 2009 সালের পর সবচেয়ে শক্তিশালী বৃদ্ধি। বার্ষিক হিসাবে মুদ্রাস্ফীতি উপরে উঠেছে 4.2%। যা কিনা 2008 সালের পর থেকে সর্বোচ্চ উন্নতি। তুলনায় 2020-র মার্চ থেকে 2021-এর মার্চ পর্যন্ত এই হার ছিল 2.6%।
মুদ্রাস্ফীতি এইভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বাজারে ফের এই গুজব শোনা যাচ্ছিল যে, আর্থিক সঞ্জীবনী কর্মসূচিতে কাটছাঁট হতে পারে এবং মার্কিন ডলারে সুদের হার বেড়ে গেছে।
ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা কমতে শুরু করেছিল। এসঅ্যান্ডপি500 ও ডাও জোন্স শেয়ার বাজারের সূচক পড়েছে, এবং 10 বছরের ইউএস ট্রেজারির উপার্জন বেড়েছে।
ফেড অবশ্য জানে, বাজারে কীভাবে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। এই নিয়ামক সংস্থার ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতি ও উপভোক্তা মূল্যে যে-বৃদ্ধি দেখতে পাওয়া গেছে, তা সাময়িক। পরিবহণ পরিষেবা ও ব্যবহৃত গাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ার ফলেই এটা মূলত হয়েছে। তাই, অর্থনীতির নির্দিষ্ট একটা ক্ষেত্রে বৃদ্ধি হচ্ছে দেখেই এফআরএস কিউই প্রোগ্রামে কাটছাঁট করবে না বা সুদের হারও বাড়াবে না।
এই ধরনের ব্যাখ্যা শোনার পর অবস্থা 180 ডিগ্রি ঘুরে গেছে। শেয়ার বাজারে লেনদেনের পরিমাণ ফের বেড়ে গেছে এবং গত আড়াই মাসে তা সর্বোচ্চ মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে। ইউরোপীয় মুদ্রাও ডলারের তুলনায় 100 পয়েন্ট বেশি লাভ করে 1.2143-এ শেষ করেছে। - জিবিপি/ইউএসডি. গত সপ্তাহে উত্থানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন 100 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর ও 85 শতাংশ অসিলেটর। কিন্তু, মাত্র 30 শতাংশ বিশেষজ্ঞের মত ছিল, এই জুটি 1.3670-1.4000 চ্যানেলের ঊর্ধ্বসীমা যেহেতু পার করেছে, তাই তারা 1.4085 রেজিস্ট্যান্সে গিয়ে পৌঁছতে পারবে। তাঁদের কথাই সত্যি হল। গত সপ্তাহের সর্বোচ্চ সীমা ছিল 1.4165, এই হার দেখা গিয়েছিল 11 মার্চ মঙ্গলবারে। পরদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাস্ফীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর এই জুটি 1.4000 লেভেলে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল। এই জুটি তখন রেজিস্ট্যান্স থেকে সাপোর্টে গিয়ে পৌঁছেছিল। দু’মাসে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে পাউন্ড লাভবান হওযার ফলেই এই পতন দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। এরপর এই জুটি কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়ে পাঁচ দিনের বাজারের শেষে ছিল 1.4096-এ।
- ইউএসডি/জেপিওয়াই. এই জুটি সম্পর্কে যা পূর্বাভাস ছিল, তা-ই প্রায় হয়েছে। ডিএক্সওয়াই ডলার সূচকে ইনভার্স কোরিলেশন প্রদর্শন করে ইয়েন 11 মে মঙ্গলবারে মজবুত হয়ে 108.35 সাপোর্টে গিয়ে পৌঁছেছিল। এমনটাই অনুমান করেছিলেন 70 শতাংশ বিশেষজ্ঞ। এরপর বাকি 30 শতাংশ বিশ্লেষকের প্রত্যাশাকে পূরণ করে এই জুটি 109.00 রেজিস্ট্যান্সকে পার করে 109.78 উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছেছিল। সপ্তাহের শেষে এই জুটি ছিল 109.35-এ।
- ক্রিপ্টোকারেন্সি. ক্রিপ্টো বাজারে যাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে, তাঁরা যেন আজকাল এই বাজারটাকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
ক্রিপ্টো বিলিয়নেয়ার ভিট্যালিক বুটেরিন গড়ে 50 শতাংশ হারে ডোজকয়েন ক্লোনের দর হেঁকেছেন। ক্রিপ্টো বাজারে তাঁর বেশ কর্তৃত্ব আছে। এমন একজনের থেকে কিছু সুবিধা পাওয়ার আশায় আছেন শিবা ইনু, অকিতা ইনু ও ডোজলন ইত্যাদি মিম কারেন্সির স্রষ্টারা। তাঁরা নিজেদের এই কয়েন উপহার পাঠিয়েছেন বুটেরিনকে। তাঁদের আশা, তিনি এই কয়েন খরচ না-করে এগুলো সম্পর্কে ভাল কোনও মতামত দেবেন। এদিকে, ইথেরিয়াম-এৎ স্রষ্টা অবশ্য 50 ট্রিলিয়ন শিবা ইনু (লেনদেনের সময় এর দর ছিল 1.2 বিলিয়ন ডলার) ভারতকে দিয়েছে কোভিড-19’এর বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, এবং অকিতা ইনুর অর্ধেক (431 মিলিয়ন ডলার) দান করেছেন গিটকয়েন প্ল্যাটফর্মে। এর ফলে, মাত্র একদিনেই এই মিম কারেন্সিগুলো তাদের অর্ধেক মূল্য খুইয়েছে।
ফেসবুক-এর প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গও নিজের স্বাতন্ত্র্য প্রকাশ করেছেন। তিনি দু’টি ছাগলের ছবি শেয়ার করেছেন, এই দুইয়ের মধ্যে একটি ছাগলকে তিনি বিটকয়েন বলেছেন। এই ছবির মধ্যে গোপন কোনও বার্তা আছে বলে মনে করছেন সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা। কেউ-কেউ আবার এই ছবি দেখে ক্ষুণ্ণ হয়েছেন। তাঁদের মনে হয়েছে, যাঁদের কাছে এই মূল ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে, তাঁদের ছাগলের সঙ্গে তুলনা করেছেন জাকারবার্গ। বিলিয়নেয়াররা যে আসলে কী বলতে চাইছেন, তা এখনও রহস্যই বটে। জাকারবার্গ ওই ছবি পোস্ট করার পর বিটকয়েনের দাম প্রায় 5,000 ডলার পড়েছে।
অবশ্য, ইলন মাস্ক যা টুইট করেছেন, তার ফলে জোর ধাক্কা খেয়েছে ক্রিপ্টোর বাজার। “খননের কাজে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ছে এবং বিটকয়েন নেটওয়ার্কের লেনদেনও বাড়ছে” বলে মাস্ক নিজের চিন্তা জাহির করেছেন বুধবারে। তিনি এ-ও ঘোষণা করেছেন যে, টেসলা-র গাড়ি ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে কেনা যাবে না। এই কথা শোনার পরেই ক্রিপ্টোর বাজারে একেবারে ধস নেমে গেছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিটকয়েন/ইউএসডি জুটি প্রায় 20 শতাংশ পড়ে গিয়ে 46,600-47,00 ডলারের জোনের মজবুত মিডিয়াম-টার্ম সাপোর্টে লেভেলে পৌঁছেছে। জুটিটা এই লেভেলকেও হয়তো ছাড়িয়ে যেত, কিন্তু বিটকয়েন নিয়ে আশঙ্কা কিছুটা কমেছিল মাস্কের এই কথা শোনার পর যে, টেসলা আঘে যে বিটকয়েন টোকেন পেয়েছে, সেগুলো বিক্রি করবে না।
তিন মাস আগেই এই খবর পাওয়া গিয়েছিল যে, টেসলা 1.5 বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বিটকয়েনে এবং তারা ক্রিপ্টোকারেন্সির বিনিময়ে নিজেদের গাড়ি বিক্রি করার জন্য তৈরি আছে। এরপরেই বিটকয়েনের দর 22 শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। তার পর থেকে গত 12 মে পর্যন্ত ক্রিপ্টো বাজারের মোট ক্যাপিটালাইজেশন বেড়েছে দ্বিগুণ। 1.180 ডলার থেকে তা বেড়ে 2.556 ট্রিলিয়ন হয়েছে। কিন্তু 12 ও 13 মে তারিখে বিটকয়েন খুইয়েছে 437 ডলার। তবে এ-ও সত্যি যে, শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে অবস্থা ক্রমশ সুস্থির হয়েছে। বাজার উঠেছে 210 বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত এবং বিটকয়েন/ইউএসডি জুটি উঠেছে 50,000 ডলার পর্যন্ত।
গত সপ্তাহে ক্রিপ্টো ফিয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইন্ডেক্স 64 থেকে 24 পয়েন্টে গিয়ে পড়েছে। এখন তা “ফিয়ার” (আশঙ্কা) জোনে আছে। ইন্ডেক্স ডেভেলপারদের মতে, এমন অবস্থায় লং পজিশন খোলার কথা ভাবা যেতে পারে। কিন্তু তা করার সময় অত্যন্ত সাবধান হতে হবে। কেননা, আশঙ্কার চোটে বিনিয়োগকারীরা হয়তো বিটকয়েন বিক্রি করতেই থাকবেন।
আমাদের পূর্ববর্তী পর্যোলোচনায় আমরা জেপিমর্গ্যান ব্যাঙ্কের বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরেছিলাম। তাঁরা বলেছিলেন, “বাজারে যত বার বড়সড় ওঠা-পড়া দেখা গিয়েছে, তত বারই প্রায় বিটকয়েনের দরও উঠেছে ও পড়েছে। সে জন্যই, সঙ্গে-সঙ্গে এর সংশোধন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে, ইথেরিয়াম লিকুইডিটি কিন্তু তুলনামূলক ভাবে ভাল এবং বাইরের ঘটনাবলিকে অনেক ভাল ভাবে প্রতিহত করে, সেগুলোর প্রভাব নিজের উপর পড়তে দেয়নি।”
গত সপ্তাহটা ফের এই বিশ্লেষণের সংশোধনকে নিশ্চিত করেছে। 14 মে শুক্রবারে বিটকয়েনের দর 2021-এর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের লেভেলে ছিল। ঠিক ওই সময়েই ইথেরিয়ামের দর 1,750 থেকে প্রায় 130 শতাংশ বেড়ে 4,000 ডলার হয়েছিল।
মূল অল্টকয়েনের ক্যাপিটালাইজেশনের বেশ ভাল বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। এ বছরের শুরু থেকে বিটকয়েন ডমিন্যান্স ইন্ডেক্স 72.65% থেকে কমে 40.55% শতাংশ হয়েছে। উলটো দিকে, ইথেরিয়ামের শেয়ার 10.79% থেকে বেড়ে 20.52% হয়েছে (সপ্তাহের সর্বোচ্চ হার)। এই ধারা বজায় থাকলে, জুলাইয়ের শেষাশেষি এই দুই ক্রিপ্টোকারেন্সির অবস্থান বাজারে সমানই থাকবে।
বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতামত একত্র করে, কারিগরি ও রৈখিক বিশ্লেষণের বিভিন্ন পদ্ধতির ভিত্তিতে করা পূর্বাভাসের ভিত্তিতে আসন্ন সপ্তাহের পূর্বাভাস হিসাবে আমরা নিম্নলিখিত কথাগুলো বলতে পারি:
- ইউরো/ইউএসডি. বাজার ফের তার জ্ঞান ফিরে পেয়েছে। এখন বাজার বুঝতে পারছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক সঞ্জীবনী কর্মসূচি শুরু হতে এখনও অনেক দেরি আছে।
বিওএফএ মেরিল লিঞ্চ-এর বিশ্লেষকদের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যা হচ্ছে, মূলত তারই প্রভাব পড়েছে ইউরো/ইউএসডি জুটির আচরণে। কিন্তু ইউরোপকে ভুলে গেলে চলবে না। ইউরোজোন-এর অবস্থা কয়েক মাস আগে যা ছিল তার তুলনায় আজ বেশ শক্তিশালী। সেখানে টিকা দেওয়ার কাজ খুব দ্রুত গতিতে হচ্ছে, সেই সঙ্গে কোয়ারেন্টিনও আস্তে আস্তে তুলে নেওয়া হচ্ছে। এসব থেকে বোঝা যাচ্ছে এখানকার অর্থনীতি খুব শীঘ্রই ঘুরে দাঁড়াবে। ইউরোপীয় কমিশন ইতিমধ্যেই এই পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে যে, 2021-এ ইউরোপের জিডিপি 3.8% থেকে বেড়ে 4.3% হবে।
নম্র আর্থিক নীতির দিকে ইউএস ফেডারেল রিজার্ভ যে ভাবে ঝুঁকে আছে এবং মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার পরেও তারা যে ভাবে শান্ত হয়ে আছে সে সবের ফলে ডলারের উপর চাপ বাড়ছে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে নিজেদের পুঁজিকে মূল্যহ্রাসের হাত থেকে রক্ষা করার উপায় খুঁজে যাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। মার্কিন শেয়ার বাজারের অবস্থা উত্থানের দিকেই আছে, যা কিনা আমেরিকার মুদ্রাকে দুর্বল করবে। কিন্তু আমাদের এটাও ভুলে গেলে চলবে না যে, ইউএশ ট্রেজারি বন্ড থেকেও ভাল উপার্জন হয়েছে। এখানে যা বৃদ্ধি হয়েছে, তা ডলারে পক্ষে সহায়ক হতে পারে।
আমরা যদি কারিগরি বিশ্লেষণের কথা বলি, তাহলে দেখব সেখানে সবুজ সংকেতের দিকেই পাল্লা ভারী। এইচ4-এ 70 শতাংশ অসিলেটর ও 90 শতাংশ ট্রেড ইন্ডিকেটর এই ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, ইউরো/ইউএসডি জুটির উত্থান হবে। এই একই কথা বলেছেন ডি1-এর 85 শতাংশ অসিলেটর ও 100 শতাংশ ট্রেড ইন্ডিকেটর।
কিন্তু, বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাসে খুব বেশি ধোঁযাশা নেই। এঁদের 50 শতাংশই মনে করেন, এই জুটি কিছু সময় 1.1985-1.2180 সাইড চ্যানেলে থাকবে। এর পাশাপাশি উভয় টাইমফ্রেমের রৈখিক বিশ্লেষণ থেকে এই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, এই জুটি প্রথমেই লেনদেনের মাত্রার নিম্নতর সীমায় গিয়ে পড়বে।
30 শতাংশ বিশ্লেষক এই রায় দিয়েছেন যে, এই সাপোর্ট ভেঙে গিয়ে এই জুটি আরও 100 পয়েন্ট নীচে গিয়ে পড়বে। বাকি 20 শতাংশ উত্থানের ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, এই জুটি 1.2250-1.2270 জোন পর্যন্ত উঠবে। আগামী সপ্তাহে কয়েকটি ঘটনার উপর নজর রাখতে হবে। 18 মে মঙ্গলবার জানা যাবে, 2021-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে ইউরোজোন-এর জিডিপি কত ছিল। অন্যদিকে 18 ও 20 মে তারিখে ইসিবি-র প্রধান ক্রিস্টিন লাগার্ডের বক্তৃতা আছে। জার্মানি ও ইউরোজোন-এর ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের তথ্যাদির একটা অংশ প্রকাশিত হবে 21 মে, শুক্রবার। সেটা নিয়েও আগ্রহ থাকবে। - জিবিপি/ইউএসডি. এইচ4 নিয়ে অসিলেটরদের যা অধ্যয়ন, তাতে বেশ বিভ্রান্তি রয়েছে। কিন্তু, তাঁদের 85 শতাংশই ডি1 নিয়ে উত্থানের কথা বলেছেন। ঠিক যেমন বলেছেন, ইউরো/ইউএসডি-র ক্ষেত্রেও। পূর্ববর্তী জুটি সম্পর্কে ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরদের যা মত, সেই একই মত এই জুটি নিয়েও। 90 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর এইচ4 নিয়ে এবং 100 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর ডি1 নিয়ে উত্থানের কথা বলেছেন।
বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞই এই আশা করছেন যে আগামী সপ্তাহটা শুরু হবে 1.4100-1.4200 রেঞ্জ দিয়ে। অবশ্য, 65 শতাংশ বিশ্লেষক ডি1 সংক্রান্ত রৈখিক বিশ্লেষণ দেখে এই আশা করছেন যে এই জুটি 1.4000 সাপোর্টে ফিরে আসবে এবং এটা সীমা পার করে পড়তে থাকলে হলে এটা 1.3670-1.4000 চ্যানেলের সেন্ট্রাল জোনে গিয়ে পৌঁছবে। রৈখিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এইচ4-এ 1.4000-1.4165-এর ল্যাটারাল চ্যানেলে গতিবিধি লক্ষ করা যাবে। এর পরেই সেই সীমা পার করে এই জুটি 24 ফেব্রুয়ারির সর্বোচ্চ সীমা 1.4240 পর্যন্ত গিয়ে উঠবে।
গ্রেট ব্রিটেনের ম্যাক্রো-ইকোনমিক পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে এ দেশের কয়েকটি তথ্যাদির উপর নজর রাখা যেতে পারে, যেগুলো আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হবে। যেমন শ্রম বাজারের তথ্যাদি প্রকাশ পাবে 18 মে তারিখ, তার পরদিন মানে 19 মে প্রকাশিত হবে উপভোক্তা বাজারের তথ্যাদি এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড ও পরিষেবা ক্ষেত্রের তথ্যাদি প্রকাশিত হবে 20 মে। - জিবিপি/ইউএসডি/জেপিওয়াই. বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ (65%) টানা তিন সপ্তাহের পর চতুর্থ সপ্তাহে পতনের কথা বলছেন। সাপোর্টের লেভেলগুলো হল 109.00 ও 108.35। টার্গেট হল 107.50। বাকি 35 শতাংশ বিশ্লেষকের মতে, এই জুটি ফের একবার 111.00 রেজিস্ট্যান্সকে পরীক্ষা করে দেখবে। শেষবার এই জুটি এমন অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল এক বছর আগে, 2020-র মার্চে।
এইচ4-এর অসিলেটরদের মধ্যে 50 শতাংশই সবুজ সংকেত দিয়েছেন, বাকি 50 শতাংশ দিয়েছেন নিরপেক্ষ ধূসর সংকেত। ডি1-এ নিরপেক্ষ অবস্থানকে প্রায় অর্ধেক কমিয়ে 25 শতাংশ করা হয়েছে। এইচ4 নিয়ে 70 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর এবং ডি1 নিয়ে 90 শতাংশ ট্রেন্ড ইন্ডিকেটর উত্থানের কথা বলেছেন। রৈখিক বিশ্লেষণে 108.85-110.35 লেনদেনের মাত্রার রূপরেখা পাওয়া যাচ্ছে। - ক্রিপ্টোকারেন্সি. প্রথমেই কারিগরি বিশ্লেষণ নিয়ে কথা বলা যাক। বিটকয়েন/ইউএসডি জুটি 50 দিনের এসএমএ পার করে উঠে গিয়ে 50,000 ডলারের জোনে নতুন পিভট খুঁজে পেয়েছে। সেখানে মজবুত হরাইজন্টাল সাপোর্ট ও 100 দিনের এসএমএ এসে মিলেছে। কিন্তু, বেশ কয়েক জন বিশেষজ্ঞের মতে, এখানেই ‘হেড অ্যান্ড শোল্ডার’ প্যাটার্নের রাইট শোল্ডার তৈরি হয়েছে। যার ফলে এই আশঙ্কা বেড়েছে যে এই জুটি উল্লিখিত জোন পার করে ক্রমশ নীচের দিকে নামতে-নামতে 40,000 ডলার লেভেলে গিয়ে পৌঁছবে। এই পতনের পরবর্তী টার্গেট হল 2021-এর জানুয়ারির নিম্ন সীমা অর্থাৎ 30,000 ডলারের জোনে পৌঁছনো।
ভিট্যালিক বুটেরিন ও ইলন মাস্ককে দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরা ডোজকয়েনকে মূল ক্রিপ্টোকারেন্সির সর্বোচ্চ মাত্রায় নিয়ে যাওয়ার ফন্দি এঁটেছেন। তাঁদের অবস্থান দেখে বিটকয়েনে বিনিয়োগকারীরা কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না। বুটেরিন তো ডোজকয়েনের প্রতিযোগী ক্লোনের দর 50 শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে ডোজকয়েনের ওঠার রাস্তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন। অন্যদিকে, মাস্ক এই ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, বিটকয়েন দিয়ে তাঁদের টেসলা গাড়ি কেনা যাবে না। তার উপর আবার, চাঁদে নতুন স্যাটেলাইট বসানোর কাজে ইলনের স্পেস-এক্স কোম্পানি যাবতীয় খরচ করেছে ডোজকয়েনের মাধ্যমে। এই ভাবে এই মিম কারেন্সির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে নিয়ে ইলনের কোম্পানিটি। ইন মাস্ক এমনকী ‘ডোজফাদার’ নামে অভিহিতও হতে শুরু করেছেন।
অবশ্য, এখনই এ কথা স্পষ্ট করে বলা যাবে না যে, প্রভাব-প্রতিপত্তিশালী লোকেরা মূল ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
তাই, বিটকয়েনের মূল্য সম্পর্কিত বিখ্যাত এস2এফএক্স প্রেডিকশন মডেলের স্রষ্টা প্ল্যানবি-র মতে, বিটকয়েনের দর বাড়তেই থাকবে। সে জন্য তিনি 8 মে তারিখে 58,776 ডলার দরে বিটকয়েন কিনে নিজের ক্রিপ্টো ওয়ালেটকে আরও মোটা করেছেন। বিটকয়েনের দাম আরও বাড়বে বলে যেসব যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এই যে, ডলার স্টেবলকয়েনে ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জের রিজার্ভ বাড়ছে। যা কিনা এখন 11.5 বিলিয়ন ডলারের সর্বোচ্চ মাত্রায় গিয়ে পৌঁছেছে। মাইনারদের একটা অংশের মধ্যেও বিটকয়েন নিয়ে আগ্রহ দেখা দিয়েছে। এই ক্রিপ্টোকারেন্সির হ্যাশ রেট ফের একবার এমন এক লেভেলে গিয়ে পৌঁছেছে, যা কিনা সর্বোচ্চ মাত্রার কাছাকাছি। বিটকয়েনের দরের গতিবিধি নিয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছেন হোয়েলম্যাপ রিসার্চ সার্ভিসের বিশ্লেষকরা। তাঁদের বিশ্লেষণ বলছে, আর্থিক জগতের চিরাচরিত কোম্পানিগুলো সহ বেশ কয়েক জন বড় বিনিয়োগকারী সোৎসাহে বিটকয়েন কিনেই চলেছেন। এসবের উপর নির্ভর করে হোয়েলম্যাপের বিশ্বাস, আগামীতে বহু দিন পর্যন্ত বিটকয়েনের দর এই 52,000 ডলারের নীচে সহজে নামবে বলে মনে হয় না। এ ছাড়াও, বিশ্লেষকদের অনুমান, আগামীতে বিটকয়েনের দর 60,000 ডলারের উপরে উঠে নিজের আসন পাকা করে নেবে।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রসঙ্গে মর্গ্যান ক্রিক ক্যাপিট্যাল-এর সিইও মার্ক ইউসকো মনে করেন, আগামী পাঁচ বছরে বিটকয়েনের দর 250,000 ডলার হবে। এই বিশেষজ্ঞের মতে, ফেসবুক, অ্যাপল, অ্যামাজন, নেটফ্লিক্স ও গুগল যে ভাবে জনপ্রিয় হয়েছে, সেই ভাবেই মূল ক্রিপ্টোকারেন্সিকেও মানুষ খুব দ্রুত আপন করে নেবে। তার মধ্যে আভার মুদ্রা বাজার এখন বেশ কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থার ফলেও বিটকয়েনের দর বাড়বে।
উসকোর মতে, “এক সময় বহু বড়-বড় কোম্পানি 10-20 বছরের মধ্যে নিজেদের সম্পত্তির পরিমাণকে ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। মূল ক্রিপ্টোকারেন্সি এই কাজটাকেই আরও গ্রুত গতিতে করে উঠতে পেরেছে। আমার মনে হয় না, অদূর ভবিষ্যতে ক্রিপ্টোকারেন্সির দর পড়তে শুরু করবে।” তিনি এ-ও বলেন, “বাজারে এখন এমন অনেক বিনিয়োগকারী আছেন, যাঁরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিটকয়েনের সঙ্গ ছাড়বেন না।”
এর পাশাপাশি, মর্গ্যান ক্রিক ক্যাপিট্যালের প্রধান ডোজফাদারের প্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়েও মন্তব্য করতে ভোলেননি। এই ফাইনান্সিয়ার বলেছেন, “সব অ্যাসেটই কাজে আসে না, এবং সবারই যে ভবিষ্যত ভাল, তা নয়। যেমন, ডোজকয়েন তো আমার চোখে একটা ঠাট্টা মাত্র। এটাকে নিয়ে বিপণন করা হচ্ছে। ইলন মাস্কের কথা শোনার পর এর দর খুব দ্রুত বাড়তে শুরু করেছে। এটাই স্বাভাবিক। আমার মনে হয়, কোনও কয়েনের প্রকৃত কোনও মূল্য না-থাকা সত্ত্বেও তার দর বাড়তে পারে।” বর্তমান পর্যোলোচনায় টেসলা ও স্পেসএক্স-এর প্রধানের নাম বারে-বারে উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে বিটকয়েন মাইন করা সংক্রান্ত পরিবেশ নিয়ে তিনি যা চিন্তা ব্যক্ত করেছেন, তার পর থেকে এই কয়েনের বাজারে ধস নেমেছে। এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে, কিছু সময় পর বিটকয়েন দুই ভাগে বিভক্ত দু’রকমের কয়েন হয়ে যাবে। একটা হবে ‘সবুজ বিটকয়েন’। যেটাকে পুনঃ-নবীকরণ যোগ্য শক্তির উৎসের মাধ্যমে মাইন করা হবে। আরেকটা হবে ‘লাল’ বিটকয়েন। যেটাকে মাইন করলে পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হবে। কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে, প্রতারকরা ইতিমধ্যেই এমন এক ‘মাইনিং ফার্ম’ উদ্ভাবন করেছেন, যেটা ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ খরচ করতে হয় না।
রাশিয়ার ছোট শহর থেকে দু’জন সন্দেহভাজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তারা দু’জন মাইনিং ফার্ম বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়েছিল ইন্টারনেটে। সেই বিজ্ঞাপন দেখে একজন গ্রামবাসী অগ্রিম 1,000 রুবল (প্রায় 13 ডলার) জমাও দিয়েছিলেন। তারপর তাঁকে ফার্মের প্যাকেজের ছবি পাঠানো হলে তিনি বাকি মূল্যও চুকিয়ে দেন। কিন্তু ডাকঘর থেকে পার্সেল নিয়ে দেখেন, তার মধ্যে রয়েছে শুদু দু’টো প্লাস্টিকের বোতল ও আগুন নেভানোর পুরনো একটা যন্ত্র। এমন ফার্ম থেকে সামান্য কিছু বের করার সম্ভাবনাও নেই। কিন্তু সত্যিই যদি কেউ এমন কিছু তৈরি করতে পারেন, তাহলে তা পৃথিবীর প্রথম পরিবেশ-অনুকূল ক্রিপ্টোকারেন্সি হবে।
নর্ড এফএক্স অ্যানালিটিক্যাল গ্রুপ
সতর্কীকরণ: এখানে যা বলা হয়েছে তা বিনিয়োগ সংক্রান্ত পরামর্শ নয় বা আর্থিক বাজারে কাজ-কর্মের কোনও পথ-নির্দেশ নয়। এসব কথার উদ্দেশ্য শুধু তথ্যের যোগান দেওয়া। আর্থিক বাজারে লেনদেন করাটা বেশ ঝুঁকির ব্যাপার এবং এখানে জমা করা পুরো টাকাই জলে চলে যেতে পারে।
ফিরে যান ফিরে যান