ইউরো/মার্কিন ডলার: বাজার চলল কর্মকর্তাদের কথায়
- প্রথম কথা, ইউএস ফেডারেল রিজার্ভের ফেডারেল ওপেন মার্কেন কমিটি (এফওএমসি) 14 জুন, বুধবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, আর্থিক কড়াকড়ির অবস্থাকে বন্ধ করা হবে এবং তারা সুদের হারকে 5.25%-এই অপরিবর্তিত রেখেছে। তার পরদিন, 15 জুন, বৃহস্পতিবার ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক (ইসিবি) ইউরোর সুদের হারকে 3.75% থেকে 25 বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে 4.00% করেছে। ইসিবি-র প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্ড উল্লেখ করেছেন যে, ক্রেডিট ও আর্থিক নীতিকে জুলাইতেও আঁটোসাঁটো রাখা হবে।
আঁটোসাঁটো রাখার এই কথাটিকে সমর্থন করেছেন ইসিবি-র অন্যান্য প্রতিনিধিগণও। ইসিবি-র গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য অলি রেন-এর মন্তব্য, ইউরোজোনে যে মূল্যস্ফীতি অন্তর্নিহিত রয়েছে তার খুব ধীর গতিতে পতন হচ্ছে, তাই মূল্যকে স্থির রাখার জন্য নিয়ামকদের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত প্রয়াস পাওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নিয়ামক যে রেট বাড়াতে থাকবেন তা নিশ্চিত হয়েছে ইসিবি-র মুখ্য অর্থনীতিবিদ ফিলিপ লেন ও ইসিবি-র গভর্নিং কাউন্সিল সদস্য ইসাবেল শন্যাবলের পক্ষ থেকেও। তাঁদের মতে, মূল্যস্ফীতি প্রায় 2%-এ স্থির হওয়ার আগে নিয়ামককে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। (সাম্প্রতিক ডেটার মতে, ইউরোজোনে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি 6.1%-এ অবস্থিত রয়েছে, এবং মূল উপভোক্তা মূল্য সূচক রয়েছে 5.3%-এ)
ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এই সব শ্যেনদৃষ্টি সূচক মন্তব্যের প্রেক্ষাপটে বাজার এই নিষ্পত্তি বের করেছে যে, অন্তত আরও দু’বার ইউরোর রেট বৃদ্ধি করা হবে, জুলাইতে ও সেপ্টেম্বরে, দু’বারই 25 বেসিস পয়েন্ট করে। এর ফলে ইউরো মুদ্রা আরও উপরের দিকে উঠে গেছে, এবং ইউরো/মার্কিন ডলার 1.1011 চূড়ায় পৌঁছে গেছে 22 জুন, বৃহস্পতিবারে।
অবশ্য, আর্থিক জগৎ শুধুমাত্র ইসিবি-কে ঘিরে আবর্তিত হয় না। 21 ও 22 জুন তারিখে, বাজারের অংশগ্রহণকারীদের মনোযোগ নিবদ্ধ ছিল মার্কিন কংগ্রেসের সামনে ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েলের অর্ধ-বার্ষিক সাক্ষ্যের উপর। সামগ্রিক ভাবে কথাবার্তা 14 জুনের সাংবাদিক সম্মেলনের প্রায় কাছাকাছি থাকার মধ্যেই, এবার পাওয়েল এই সম্ভাবনার উপর বেশি জোর দিয়েছেন যে, নিকট ভবিষ্যতে রেট আরও বাড়ানো হবে। ফেড-এর চেয়ারম্যানের এই শ্যেনদৃষ্টি সুলভ অবস্থান এবং বাজারের ঝুঁকি-বিরোধী পরিবেশের ফলে আমেরিকার মুদ্রা তার প্রতিযোগীদের ছাপিয়ে চলে গেছে। বৃহস্পতিবার মার্কিন ডলার সূচক (ডিএক্সওয়াই) তার গতিপথ উলটিয়ে ফের উপরের দিকে উঠতে শুরু করেছিল, অন্যদিকে ইউরো/মার্কিন ডলারের পতন হয়েছে।
ইউরোজোনে মন্দা নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে থাকায় ইউরোর ক্ষতি হয়েছে। 23 জুন, শুক্রবার, ইউরোপীয় মুদ্রাটি উল্লেখযোগ্য ভাবে পড়তে শুরু করেছিল। কেননা, জার্মানি ও ইউরোজোন থেকে আসা তথ্য এই ইঙ্গিত দিয়েছিল যে উৎপাদন ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ (পিএমআই) দ্রুত গতিতে হ্রাস পাচ্ছে। পিএমআই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার পর, রয়টারের গণনা অনুযায়ী, ইসিবি-র চূড়ান্ত রেট 4.25%-এ পৌঁছতে পারে, হ্রাস হয়েছে প্রায় 0%, এবং ইউরো/মার্কিন ডলার 1.0844 স্তরের স্থানীয় ন্যূনতম মাত্রায় পৌঁছেছে।
অবশ্য, ইউরোপীয় এই মুদ্রার অবস্থা এত মারাত্মক নয়, অন্তত মধ্যবর্তী মেয়াদে। যেমন, এএনজেড (অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের ব্যাঙ্কিং গোষ্ঠী)-র অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে, এ বছরের শেষাশেষি ফেডারেল রিজার্ভ হয়তো মূল সুদের হার 20 বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে দিতে পারে, অন্যদিকে, বাজারের প্রত্যাশা বলছে যে, ইসিবি তাদের রেট 2024-এর শুরু পর্যন্ত কমাবে না। তার ফলে, ফেড-এর তুলনায় ইসিবি-র নীতি শিথিলতার চাকা আরও পরে ঘুরবে এবং তার গুরুত্বও কম। যা ইউরোর অনুকূলেই যাবে। তার পরিণতিতে, তৃতীয় ত্রৈমাসিকে ইউরো/মার্কিন ডলার 1.1200 পর্যন্ত উঠতে পারে। এএনজেড-এর মতে, সামগ্রিক ভাবে বিদেশি মুদ্রা বিনিময়ের রেট 2023 সাল জুড়ে 1.0500 থেকে 1.1400-এর মধ্যে ওঠা-নামা করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ও পরিষেবা ক্ষেত্রের পিএমআই ডেটা প্রকাশিত হওয়ার পর, ইউরো/মার্কিন ডলার তাদের পাঁচ দিনের মেয়াদ শেষ করেছে 1.0893-এ। তাৎক্ষণিক সম্ভাবনা নিয়ে বলা যেতে পারে যে, 24 জুন সন্ধ্যায় এই পর্যালোচনা লেখার সময় পূর্বাভাসকে খুবই অনিশ্চিত মনে হচ্ছে: 45% বিশ্লেষকই এই জুটির পতন হবে বলেছেন, অন্যদিকে, শতকরা সমান সংখ্যক বিশ্লেষক বৃদ্ধির আশা ব্যক্ত করেছেন। এবং বাকি 10% নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করেছেন। দৈনিক টাইমফ্রেম সম্পর্কিত অসিলেটরদের মধ্যে 90% উত্থানের কথা বলেছেন, এবং 10% রয়েছেন নিরপেক্ষ-ধূসর অবস্থানে। ট্রেন্ড সূচক সম্পর্কে 80% সবুজ সংকেত দিয়েছেন, এবং 20% দিয়েছেন লাল সংকেত। এই জুটির নিকটতম সাপোর্ট লেভেল অবস্থিত থেকেছে প্রায় 1.0865-এ, তারপর হয়েছে 1.0790-1.0800, 1.0745, 1.0670, এবং অবশেষে 31 মে তারিখে নেমেছে 1.0635-এ। প্রতিরোধের মুখে উত্থান পড়েছে প্রায় 1.0900-1.0925-এ, তারপর হয়েছে 1.0960-1.0985, 1.1010, ও 1.1045। আরও প্রতিরোধের মুখে পড়েছে 1.1090-1.1110-এ।
আসন্ন সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে একের পর এক ম্যাক্রো-ইকোনমিক ডেটা আসতে চলেছে। আমরা আশা করতে পারি যে, হাউজিং মার্কেট ডেটা আসবে 27 জুন, মঙ্গলবারে। সেই সঙ্গে, ডিউরেবল গুডস অর্ডার ও ক্যাপিটাল গুডস অর্ডারও প্রকাশিত হবে। তদুপরি, শীর্ষ সূচক কনফারেন্স বোর্ডের পক্ষ থেকে কনজিউমার কনফিডেন্স ইন্ডেক্স (সিসিআই) ঘোষণা করা হবে। পরদিন দেশের ব্যাঙ্ক স্ট্রেস টেস্টস-এর ফলাফল প্রকাশ করা হবে। 28 জুন, বুধবার বিশেষ ভাবে আকর্ষণীয় হয়ে থাকবে ফেড-এর পক্ষ থেকে সূদের হার বাড়ানোর পর ব্যাঙ্কিং সংকট দেখা দিয়েছে বলে। এ ছাড়াও, ওই একই দিনে, ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোমি পাওয়েল একটি বক্তৃতা পেশ করবেন। বৃহস্পতিবারে বের হবে দেশের শ্রম বাজারের পরিসংখ্যান ও জিডিপি। সব শেষে, 30 জুন, শুক্রবার, মূল্যস্ফীতি মূল পরিমাপ কোর পার্সোনাল কনজামশন এক্সপেন্ডিচার (পিসিই) প্রকাশিত হবে মার্কিন নাগরিকদের জন্য। ইউরোজোনের অর্থনীতির ক্ষেত্রে, জার্মানির এবং সামগ্রিক ভাবে ইউরোজোনের প্রাথমিক মূল্যস্ফীতির সংখ্যা (সিপিআই) প্রকাশিত হবে যথাক্রমে 29 ও 30 জুন তারিখে। সেগুলি নিয়ে আগ্রহ থাকবে।
জিবিপি/মার্কিন ডলার: ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার বিলম্বিত চমক
- গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য সম্পর্কিত যে অর্থনৈতিক ডেটা প্রকাশিত হয়েছে তা মিশ্রিত বলে মনে হয়েছে। মূল্যস্ফীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক, কনজিউমার প্রাইস ইন্ডেক্স (সিপিআই), এ মাসে অপরিবর্তিত থেকে বছরের পর বছরের হিসাবে 8.7%-এ রয়েছে, যা বাজারের প্রত্যাশাকে ছাপিয়ে গেছে। এই প্রত্যাশা ছিল 8.4%। খুচরো বিক্রিতে ইতিবাচক রূপরেখা লক্ষ করা গেছে। কেননা, এ মাসে এটি অপ্রত্যাশিত ভাবে 0.3% পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ মনে করা হয়েছিল যে, এই হার 0.2% হ্রাস পাবে। উল্লেখ্য, পূর্ববর্তী হার ছিল 0.5%। গাড়ির জ্বালানি বাদ দিয়ে মূল খুচরো বিক্রি বেড়েছে 0.1%, অথচ এ ব্যাপারে নেতিবাচক পূর্বাভাস দিয়ে বলা হয়েছিল এই হার হবে -0.3%। পূর্ববর্তী মাসে এই হার ছিল 0.7%। অবশ্য, দেশে ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপের সূচক হতাশাজনক ছিল। জুনে প্রাথমিক সার্ভিসেস পারচেজিং ম্যানেজার্স’ ইন্ডেক্স (পিএমআই) হ্রাস পেয়ে হয়েছে 53.7। অথচ আশা করা হয়েছিল এই হার হবে 54.8। ম্যানুফ্যাকচারিং পিএমআই-ও প্রত্যাশা অনুরূপ হয়নি। তা 47.1 থেকে কমে হয়েছে 46.2 (পূর্বাভাস ছিল 46.8)।
21 জুন তারিখে মূল্যস্ফীতির যে ডেটা প্রকাশিত হয়েছে তা শুধু বাজারের প্রত্যাশাকেই ছাপিয়ে যায়নি, বরং ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড (বিওই)-র নিজস্ব পূর্বাভাসকেও অতিক্রম করে চলে গেছে। এই প্রেক্ষাপটে, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কটি 2 জুন, বৃহস্পতিবারে নিজেদের বৈঠকের সময় বেস রেটকে 25 বেসিস পয়েন্টের বদলে 50 বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে বাজারকে চমকে দিয়েছে। এখন এই বেস রেট হল 5.00%।
প্রচলিত যুক্তি অনুসরণ করে বলা যায়, এমন সিদ্ধান্ত ব্রিটিশ মুদ্রাকে উল্লেখযোগ্য সমর্থন করবে। অবশ্য, তেমন কিছু ঘটেনি। বিওই-র সিদ্ধান্তের পরেই 10 মিনিটের মধ্যে জিবিপি/মার্কিন ডলার প্রাথমিক ভাবে 60 পিপ বেড়ে 1.2841 হয়েছিল, কিন্তু তারপরেই তা 100 পিপ নীচে নেমে চলে গিয়েছিল 1.2737-এ। বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, প্রাথমিক ভাবে যে-ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল তা হয়েছিল সংবাদের শিরোনামের প্রতি প্রতিক্রিয়াশীল অ্যালগোরিদম ভিত্তিক ট্রেডিং-এর জন্য, কিন্তু পরে এই ঊর্ধ্বমুখী গতি স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল বিক্রেতারা 14 মাসে সর্বোচ্চ রেজিস্টেন্সের মুখে পড়ে। সর্বোচ্চ এই রেজিস্টেন্স দেখা গেছে 16 জুন তারিখে।
নেদারল্যান্ডস, আইএনজি-র বৃহত্তম ব্যাঙ্কিং গোষ্ঠীর কৌশলবিদগণ মনে করছেন যে, 150 বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত যে রেট বাড়ানো হবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বৈঠেকের আগে থেকেই ঠিক করা ছিল। তার মধ্যে 50 বেসিস পয়েন্ট রেট বাড়ানো হয়ে গিয়েছিল, এখন বাজার আশা করছে যে এই রেট আরও 100 বেসিস পয়েন্ট বেড়ে 6.00% হবে। আগ্রাসী ভাবে রেট বাড়ানোর পাশাপাশি, বাজারে এই অনুমান বেড়ে চলেছে যে, অর্থনৈতিক পতনকে এড়িয়ে চলার জন্য ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড হয়তো 2024-এর গ্রীষ্মের সময় থেকে (বা আরও আগে থেকে) তাদের আর্থিক নীতিকে শিথিল করা শুরু করতে বাধ্য হবে।
কমার্জব্যাঙ্ক-এর অর্থনীতিবিদগণ এই যুক্তি দিচ্ছেন যে, বিওই মুখ্য রেট খুব দেরি করে এবং খুব ধীর গতিতে বাড়াতে শুরু করেছে, এই ভাবে তারা অন্যের সমতুল্য বা আরও ভাল অবস্থানে নিয়ে যেতে চাইছে। তাঁদের মতে, এই নিয়ামক সংস্থা আর্থিক নীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির মোকাবিলা করার বদলে তার পিছু ধাওয়া করছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে ব্রিটিশ মুদ্রার উপর।
অবশ্য, ভিন্নমতও রয়েছে। উদারহণ স্বরূপ, স্কটিয়াব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদগণ মনে করছেন যে নিকট ভবিষ্যতে জিবিপি/মার্কিন ডলার 1.3000 পর্যন্ত উঠতে পারে। ING-র অর্থনীতিবিদরা এই মত ব্যক্ত করেছেন, “চার্ট দেখে মনে হচ্ছে, বর্তমান লেভেল ও 1.3000-র মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনও লেভেল নেই। এর থেকে বোঝা যাচ্ছে 1.3000-র লেভেল বেশি দূরে নেই।”
গত সপ্তাহে জিবিপি/মার্কিন ডলার থেমেছে 1.2714 লেভেলে। বর্তমান অস্থির অবস্থা দেখে তাত্ত্বিক ভাবে বলা যেতে পারে যে, এই জুটি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বা কয়েক দিনের মধ্যেই 1.3000-র লেভেলে পৌঁছনোর অবশিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করে ফেলবে। বর্তমানে 45% সমীক্ষা বিশেষজ্ঞরা এমন অবস্থার সপক্ষে কথা বলেছেন, কিন্তু বিপরীত মত পোষণ করেছেন 25%। কোনও মন্তব্য করা থেকে বিরত থেকেছেন 30%। টেকনিক্যাল বিশ্লেষণের নিরিখে, অসিলেটর ও ট্রেন্ড সূচক, উভয়ের অনুমানে ডেলি টাইমফ্রেমে জিডিপি/মার্কিন ডলার সম্পর্কে পরস্পরের একই মত প্রতিফলিত হয়েছে। এই জুটি নীচে পড়তে পড়তে 1.2685-1.2700, 1.2625, 1.2570, 1.2480-1.2510, 1.2330-1.2350, 1.2275, ও 1.2200-1.2210 সাপোর্ট লেভেল ও জোনে গিয়ে পৌঁছবে। ঊর্ধ্বমুখী গতি হলে এই জুটি 1.2760, 1.2800-1.2815, 1.2850, 1.2940, 1.3000, 1.3050, ও 1.3185-1.3210 রেজিস্টেন্স লেভেলে পৌঁছবে।
আসন্ন সপ্তাহে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটবে 30 জুন, শুক্রবারে। সেদিন যুক্তরাজ্যের জিডিপি ডেটা প্রকাশ করা হবে।
মার্কিন ডলার/জেপিওয়াই: চাঁদের উদ্দেশে যাত্রা অব্যাহত
- কয়েক সপ্তাহ আগে আমরা মার্কিন ডলার/জেপিওয়াই-কে “চাঁদে যাওয়ার টিকিট” দিয়েছিলাম। তা এখনও কার্যকর রয়েছে। গত সপ্তাহে এই জুটি 143.86 উচ্চতায় পৌঁছেছিল। কমার্জব্যাঙ্কের মতে, “ইয়েনের দুর্বলতা ক্রমে এক নাটকীয় রূপ ধারণ করছে।” সিঙ্গাপুরের ইউনাইটেড ওভারসিজ ব্যাঙ্ক (ইউওবি)-র অর্থনীতিবিদগণের পূর্বাভাস, আগামী 1-3 সপ্তাহে ডলার হয়তো উপরের দিকে উঠতে থাকবে। তাঁরা বলেছেন, “পরবর্তী উল্লেখযোগ্য লেভেল হল 144.00। এখনই এই সিদ্ধান্তে আসা খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাবে যে, ডলারের শক্তি [...] এই বাধা পার করে যেতে পারবে কি না। অন্যদিকে, আমাদের মজবুত সাপোর্ট লেভেলকে ঠিকঠাক করে নিয়ে আসা হয়েছে 141.60 থেকে 141.00-এর মধ্যে।”
এমইউএফজি ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদগণ মনে করেন যে, ব্যাঙ্ক অব জাপান ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের আর্থিক নীতির মধ্যে যেভাবে পার্থক্য বাড়ছে তার ফলে ইয়েন আরও দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এমইউএফজি-র বিশ্লেষকরা লিখেছেন, “জাপান ও অন্যান্য দেশের মধ্যে ইল্ড-এর পার্থক্য বেড়েই চলেছে, সেই সঙ্গে মুদ্রা হ্রাস পাচ্ছে এবং রেট অস্থির হচ্ছে। এসবের ফলে ইয়েনের দাম ক্রমশ পড়ছে।” ফ্রান্সের আর্থিক গোষ্ঠী সোসিয়েট জেনারেল-এর অর্থনীতিবিদদের মতে, জুলাইতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি ফের সুদের হার বৃদ্ধি করে, তাহলে মার্কিন ডলার/জেপিওয়াই জুটি হয়তো 145.00 পর্যন্ত উঠতে পারে।
এ কথা স্পষ্ট যে, ইয়েন শুধুমাত্র ব্যাঙ্ক অব জাপান (বিওজে)-র অনবরত ‘পারাবত’ সুলভ অবস্থানের জন্যই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং বিশ্বব্যাপী ইল্ড-এর সামগ্রিক বৃদ্ধির প্রভাবও তার উপর পড়ছে। বিওজি যদি শেষ পর্যন্ত তাদের অতি-শিথিল আর্থিক নীতিতে ইতি টানার দিকে প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলে আশা করা যায় যে, তবেই জাপানি মুদ্রাটির উপর থেকে চাপ দূর করা যেতে পারে। যেমন, দানস্কে ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদগণ আশা করছেন যে, 6 থেকে 12 মাসের মধ্যে মার্কিন ডলার/জেপিওয়াই-এর বিনিময় মূল্যের হার 13.00-র নীচে চলে যাবে। একই পূর্বাভাস দিয়েছেন বিএনপি পরিবাসের কৌশলবিদগণ। তাঁরা এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন যে, চলতি বছরের শেষের দিকে বিনিময় মূল্যের রেট হবে 130.00 এবং 2024-এর শেষাশেষি তা হবে 123.00।
জাপান সরকার ও ব্যাঙ্ক অব জাপান সম্পর্কে বলা যায় যে, তারা মনে হয় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার জন্য এখনই প্রস্তুত নয়। গত সপ্তাহে, অর্থমন্ত্রী শুনিচি সুজুকি বলেছেন যে, তাঁরা মুদ্রার গতিবিধির উপর খুব ভাল ভাবে নজর রাখছেন, কিন্তু সেই ব্যাপারে মন্তব্য করার কোনও ইচ্ছা তাঁদের নেই। তিনি আরও বলেন, “মুদ্রার প্রখর গতিবিধি প্রত্যাশিত নয়” এবং “মুদ্রার রেট নির্ধারণ করা উচিত বাজারের, যার মধ্যে মৌলিক সূচকগুলির প্রতিফলন থাকবে।” অবশ্য, আমাদের মনে হচ্ছে যে, অর্থ মন্ত্রকের প্রধানের কথায় বিভ্রান্তি রয়েছে। আমাদের শুধু মনে রাখতে হবে যে, অর্থ মন্ত্রকের তৎপরতায় ব্যাঙ্ক অব জাপান গত বছর অপ্রত্যাশিত ভাবে মুদ্রার ক্ষেত্রে বেশ কিছু হস্তক্ষেপ করেছিল। সেই সব হস্তক্ষেপের ফলে ইয়েন 1,500 পিপ-এর উপরে উঠে গিয়ে ডলারের সামনে শক্তিশালী হতে পেরেছিল। এই একই চমক এখন দেখতে পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই কি?
143.86 উচ্চতায় পৌঁছে এই জুটি গত পাঁচদিনের মেয়াদ শেষ করেছে 143.71-এ। এই পর্যালোচনা লেখার সময়, 60% বিশ্লেষক অনুমান করছেন যে ইয়েন নিজের কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে এবং ডলার-ইয়েন জুটি নীচে নেমে যাবে। অন্যদিকে, 30% বিশেষজ্ঞ পশ্চিমমুখিনতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে, এই জুটির বৃদ্ধির সমর্থনে আছেন মাত্র 10% বিশেষজ্ঞ। উল্লেখ্য, সংখ্যালঘুর অনুমানও ঠিক হতে পারে। তদুপরি, এই জুটির বৃদ্ধির সমর্থনে আছেন টেকনিক্যাল বিশ্লেষকরাও। ডেলি টাইমফ্রেম বিষয়ক ট্রেন্ড সূচক ও অসিলেটরদের পুরো 100% ঊর্ধ্বমুখিনতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। নিকটতম সাপোর্ট লেভেল রয়েছে 143.00-143.20 জোনে, তারপর আছে 142.20, 1.4140, 140.90-141.00, 1.4060, 139.85, 1.3875-1.3905, 138.30, ও 137.50। নিকটতম রেজিস্টেন্স রয়েছে 143.85-এ। তারপর ঊর্ধ্বগতিকে বাধা টপকাতে হবে 144.90-145.30, 146.85-147.15, 148.85-এ। তারপর এই জুটি সম্ভবত 2022-এর অক্টোবরের সর্বোচ্চ মাত্রা 151.95-তে গিয়ে পৌঁছবে।
আসন্ন সপ্তাহে জাপানের অর্থনীতি সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য কোনও অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশিত হবে বলে মনে হয় না।
ক্রিপ্টোকারেন্সি: বিটকয়েনের উপর বাজি রাখছেন ইনফ্লুয়েন্সাররা
- টানা নয় সপ্তাহ ধরে ক্রিপ্টো বাজারে পতনের প্রাধান্য। অবশ্য, 15 জুন তারিখে আচমকাই পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল বিটকয়েনে অপ্রত্যাশিত ভাবে দ্রুত ঊর্ধ্বগতি দেখতে পাওয়ার ফলে। 23 জুন তারিখে এটি $25,000, $26,500-এ রেজিস্টেন্স লেভেল ভেঙে $30,000-কে পার করে $31,388-র চূড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। এই দিনগুলিতে বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল 26%-এর উপরে। অল্টকয়েনও বিটকয়েনের এই ঊর্ধ্বমুখী গতিকে অনুসরণ করেছিল, যেমন ইথেরিয়াম প্রায় 19% ওজন বাড়িয়ে ফেলেছে।
একের পর এক ইতিবাচক খবর আসার ফলেই বিটকয়েন ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল। এসবের মধ্যে প্রধান খবরটি হল এই যে, বিশাল বিনিয়োগ গোষ্ঠী ব্ল্যাকরক স্পট বিটকয়েন ট্রাস্ট চালু করার জন্য একটি আবেদন পত্র জমা দিয়েছে। যার লক্ষ্য হল ক্রিপ্টো বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক প্রবেশকে সহজ করে তোলা। অবশ্য, শুধু এই খবরই সব নয়। জার্মানির বৃহত্তম আর্থিক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্যতম ডয়েশে ব্যাঙ্ক ঘোষণা করেছে যে, তারা ডিজিটাল সম্পদের বাজারে প্রবেশ করছে এবং তারা ক্রিপ্টোকারেন্সি হেফাজত পরিষেবার কাজে যুক্ত হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিটের বিশাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান সিটাডেল ও ফিডেলিটি একসঙ্গে হাত মিলিয়ে 20 জুন তারিখে ইডিএক্স মার্কেট নামে একটি বিকেন্দ্রীকৃত ক্রিপ্টো বিনিময়ের বাজার শুরু করেছে। আরও এক বিশাল বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেসকো স্পট বিটকয়েন ইটিএফ-এর জন্য আবেদন জানিয়েছে। তারা 1.4 ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি পরিচালনা করে। (মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি মনে করে যে এই ধরনের ইটিএফ ট্রিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার টানতে পারে)। পরিশেষে বলতে হয়, টিদার (ইউএসডিটি)-র নতুন ব্যাচ স্টেবলকয়েন্স জারি হওয়ার ফলেও বিটকয়েন/মার্কিন ডলার বৃদ্ধির মুখ দেখেছে।
উল্লেখ্য, ডিজিটাল বাজারের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সত্ত্বেও শীর্ষস্থানীয় ক্রিপ্টোকারেন্সি ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। এর আগে বাইন্যান্স ও কয়েনবেস-এর বিরুদ্ধে এসইসি এই অভিযোগে মামলা দায়ের করেছিল যে, এই প্ল্যাটফর্মগুলি অনিবন্ধিত সিকিউরিট বিক্রি করছে। আদালতের নথিতে এই কমিশন সিকিউরিটি হিসাবে বারোটির বেশি টোকেনকে শ্রেণিবদ্ধ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই নিয়ামক সংস্থা জয়ী হলে উক্ত কয়েনগুলি তালিকা বহির্ভূত হয়ে যাবে এবং তাদের ব্লকচেনগুলির সম্ভাব্য বিকাশও বাধা পাবে। এই নিয়ামক সংস্থা ইতিমধ্যে 60-এর বেশি কয়েনকে নিষিদ্ধ কয়েনের তালিকায় রেখেছে।
বিনিয়োগ বিষয়ক বিখ্যাত সব বইয়ের লেখক প্রেস্টন পিশ মনে করেন যে, নিয়ামক সংস্থা যে-চাপ সৃষ্টি করছে, তা একটি পরিকল্পিত অভিযান। তাদের লক্ষ্য হল বড়-বড় বিনিয়োগকারীরা যাতে অনুকূল পরিবেশের মধ্যে ডিজিটাল সম্পদের বাজারে প্রবেশ করার সুযোগ পেতে পারে। তিনি নিজের মতের সপক্ষে ওয়াল স্ট্রিটের বিশাল সংস্থাগুলির সাহসী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেছেন। ওই পদক্ষেপগুলির কথা এখানে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
টিভি সঞ্চালক তথা বিলিয়নেয়ার মার্ক কিউবান ও এসইসি-র প্রাক্তন এগজিকিউটিভ জন রিড স্টার্ক ক্রিপ্টো শিল্পক্ষেত্রের উপর চলতি কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছেন। স্টার্ক মনে করেন যে, এসইসি যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, সেগুলির প্রয়োজন ছিল। তাঁর মতে, এই নিয়ামক সংস্থা বিনিয়োগকারীদের এই ক্ষেত্রের সম্ভাব্য প্রতারণা ও কেলেঙ্কারির হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে। তিনি এই মতও ব্যক্ত করেছেন যে, এসইসি যেসব পদক্ষেপ করেছে তার ফলে অসৎ অংশগ্রহণকারীদের ছেঁকে বের করে দিয়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অবশেষে শিল্পক্ষেত্রেরই উপকার হবে। অন্যদিকে, মার্ক কিউবান কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ঘটনাটিকে ইন্টারনেটের প্রথম দিককার দিনগুলির সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই বিলিয়নেয়ারের মতে, “90% ব্লকচেন কোম্পানি ডুবে যাবে। 99% টোকেন নষ্ট হবে। ঠিক যেমন প্রথম দিককার ইন্টারনেট কোম্পানিগুলির মধ্যে 99%-ই ডুবে গিয়েছিল।”
উল্লেখ্য, বহু ইনফ্লুয়েন্সারই ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছেন এবং তাঁরা বিটকয়েনকে আলাদা করে রাখছেন। আমরা ইতিমধ্যে ইনটু দ্য ক্রিপ্টোভার্স-এর প্রতিষ্ঠাতা বেনজামিন কোয়েনের উদ্ধৃতি উল্লেখ করেছি। তিনি মনে করেন যে অল্টকয়েনগুলি “নিয়ে তুল্যমূল্য বিচার চলবে কিন্তু বিটকয়েনের প্রাধান্য বাড়তেই থাকবে।” প্রখ্যাত ট্রেডার গ্যারেথ সোলোওয়ে অনুরূপ মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন যে, তিনি সব সময় ক্রিপ্টোর বাজারকে ডট-কমের বুদবুদের সঙ্গে তুলনা করে এসেছেন। তাঁর মতে, 2000-এর শুরুর দিকে যে পতন দেখা গিয়েছিল, সেই রকম পতন এই শিল্পেক্ষেত্রেও দেখতে পাওয়া যাবে। সোলোওয়ে নিশ্চিত করে বলেছেন যে, টিকে থাকার জন্য “এই সিস্টেমের মধ্যে থাকা জঞ্জাল সরাতে হবে।” তিনি মনে করেন যে, 95% টোকেনই “শূন্যতার দিকে এগিয়ে যাবে।”
‘রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড’ বইয়ের লেখক রবার্ট কিয়োসাকি সম্প্রতি সতর্ক করেছেন যে, রিয়েল এস্টেটের বাজারে ধস নামতে চলেছে। এই বিশেষজ্ঞের মতে, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত বন্ধকি ঋণদাতা সংস্থা লোনডিপো ইতিমধ্যেই দেউলিয়া হওয়ার পথে, এবং রিয়েল এস্টেট বাজারে যে-ধস নামতে চলেছে তা 2008-এর সংকটের চেয়েও খারাপ হবে। এই অবস্থায় কিয়োসাকি ফের একবার তাঁর অনুসরণকারীদের এই পরামর্শ দিয়েছেন যে, দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে এবং মূল্যবান ধাতু ও বিটকয়েন জমিয়ে যেতে হবে।
গ্যালাক্সি ডিজিটালের সিইও মাইক নোভোগ্রাৎজও মনে করেন যে, মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিকল্প মাধ্যমগুলির চাহিদা বাড়বে, এবং সেগুলির মধ্যেই অন্যতম হল বিটকয়েন, যা কিনা দীর্ঘ মেয়াদে $500,000-এ পৌঁছবে বলে তিনি মনে করেন। প্রাক্তন ট্রেডার ও টেলিভিশন সঞ্চালক ম্যাক্স কাইজার, যিনি কিনা এখন সালভাডোরের প্রেসিডেন্ট নয়িব বুকেলের একজন উপদেষ্টাও বটে, বলেছেন যে, কয়েন প্রতি 1 মিলিয়ন ডলার পর্যন্তও দাম উঠতে পারে। এআরকে ইনভেস্টের সিইও ক্যাথি উডও মনে করেন যে, 1 মিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো যেতেই পারে।
‘বাজারের রহস্যময় জাদুকর’ নামে পরিচিত পিটার ব্র্যান্টও বিটকয়েনের প্রশংসাকারীদের সারিতে নিজের নাম লিখিয়েছেন। তিনি বিটকয়েন বাদে বাকি প্রায় সব কয়েন নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিংবদন্তি এই ট্রেডার ও বিশ্লেষক বলেছেন যে, বিটকয়েনই হল একমাত্র ক্রিপ্টোকারেন্সি যে সফল ভাবে এই ম্যারাথন দৌড় শেষ করবে। পরে তিনি আরও বলেছেন যে, ইথেরিয়াম (ইটিএইচ)-ও টিকে যেতে পারে, তবে প্রকৃত উত্তরাধিকার থাকবে বিটকয়েনেরই হাতে। এখানে আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, বেনজামিন কোয়েনও ইথেরিয়ামের ক্ষেত্রে সমস্যার কথা অনুমান করে বলেছেন যে, ইটিএইচ/বিটিসি অদূর ভবিষ্যতে 2021-এর প্রথম ত্রৈমাসিকের লেভেলে গিয়ে পড়ে যেতে পারে, এই জুটি সম্ভবত তাদের বর্তমান মূল্যের 45% পর্যন্ত মূল্য খোয়াতে পারে।
ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফার্ম প্লেসহোল্ডার-এর একজন অংশীদার ক্রিস বারনিস্ক মন্তব্য করেছেন যে, ন্যাসড্যাক 100 (এনডিএক্স) যখন বিশ্রাম নেয় তখন ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি প্রায়ই বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা লাভ করে। স্টক ঠান্ডা পড়ে যাওয়ায় বেশি ঝুঁকির সম্পদগুলিতে পুঁজির স্রোত বইতে শুরু করেছে, এবং বিটকয়েন ঊর্ধ্বমুখী যাত্রা শুরু করে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বারনিস্ক গ্লাসনোড-এর প্রতিষ্ঠাতা জ্যান হ্যাপেল ও ইয়ান অ্যালেমানের পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁদের অনুসন্ধানে জানা গেছে যে, 2019 সাল থেকে এনডিএক্স-এ পতনের লক্ষণ দেখতে পাওয়ার পরেই বিটকয়েন দৃঢ়তার সঙ্গে বৃদ্ধির পথে এগিয়েছে। বর্তমানে, বিটকয়েন ফের একবার এনডিএক্স-কে ছাপিয়ে যাওয়ার থেকে মাত্র কয়েক ধাপ দূরে রয়েছে, কেননা সূচক এখন স্থানীয় চূড়ার সামনে রয়েছে।
জনপ্রিয় বিনিয়োগকারী তথা ভেঞ্চার কোম্পানি এইট-এর প্রতিষ্ঠাতা মাইকেল ভ্যান ডে পপে মনে করেন যে, বর্তমানে বাজারের যা অবস্থা সেখানে বিটিসি সম্পর্কে থাকা নেতিবাচক পূর্বাভাস সত্যি হওয়া অসম্ভব। উল্লেখ্য, বেশ কয়েকজন লেখক অনুমান করেছিলেন যে, ক্রিপ্টোকারেন্সির দর $12,000-এ গিয়ে পড়বে। পপের মতে, বিনিয়োগকারীদের এখন আরও বৃদ্ধির প্রত্যাশা নিয়ে “নিজেদের পকেট ভরে নেওয়া” উচিত।
21 জুন, বৃহস্পতিবার বিটিসি-র প্রাধান্য 50%-এ গিয়ে পৌঁছেছে। এর অর্থ, পুরো ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের মূলধনীকরণের অর্ধেকেরই দায় নিচ্ছে এই সম্পদ। শেষ বার সূচক এই উচ্চতায় পৌঁছেছিল দু’বছর আগে 2021-এর মে মাসে। বর্তমান এই উত্থানের পিছনে রয়েছে দু’টি কারণ। এক. অল্টকয়েনগুলির উপর এসইসি-র চাপ এবং দুই. ব্ল্যাকরক-এর পক্ষ থেকে স্পট বিটকয়েন ট্রাস্টের জন্য আবেদন পত্র জমা দেওয়া। মাইক্রোস্ট্র্যাটেজি-র সিইও মাইকেল সেলর মনে করেন যে, বিটকয়েনের প্রাধান্য বাড়তেই থাকবে এবং আগামী বছরগুলিতে এটি 80%-এ গিয়ে পৌঁছবে। তিনি বলেন, “বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন মানের 25,000 টোকেন আছে, যা বিপুল সংখ্যক বিনিয়োগকারীকে বিভ্রান্ত করছে। এসইসি-র মাধ্যমে অনাবশ্যক সম্পদ দূর করার পর, প্রধান মূলধন আরও বেশি করে প্রথম সারির ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করতে চাইবে।”
23 জুন, শুক্রবার, এই পর্যালোচনা লেখার সময়, বিটকয়েন/মার্কিন ডলার-এর ট্রেডিং হচ্ছিল প্রায় 30,840 ডলারে। ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের মোট বাজার মূলধনীকরণ অবস্থিত ছিল 1.196 ট্রিলিয়ন ডলারে (এক সপ্তাহ আগে ছিল 1.064 ট্রিলিয়ন ডলার)। ক্রিপ্টো ফিয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইন্ডেক্স গোটা সপ্তাহ জুড়ে নিউট্রাল জোন থেকে লাফ দিয়ে গ্রিড জোনে গিয়ে মধ্য-এপ্রিলের লেভেলে ফিরে গিয়েছে, এবং এর পয়েন্ট 47 থেকে বেড়ে 65 হয়েছে।
নর্ডএফএক্স অ্যানালিটিক্যাল গ্রুপ
বিজ্ঞপ্তি : এসব তথ্য আর্থিক বাজারে কাজের জন্য বিনিয়োগ বা পরামর্শ হিসেবে কোনো সুপারিশ নয় এবং এগুলি একমাত্র তথ্যমূলক উদ্দেশ্যের জন্য। আর্থিক বাজারে ট্রেডিং খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং এর ফলে ডিপোজিটকৃত ফান্ডের পরিপূর্ণ ক্ষতি হতে পারে।
ফিরে যান ফিরে যান