হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং, পিপসিং, স্কালপিং, ডে ট্রেডিং, মাঝারি ও দীর্ঘমেয়াদি ট্রেডিং

আর্থিক বাজারে ট্রেডিঙের জন্য অনেক উপায় ও কৌশল আছে। এগুলি ঝুঁকির মাত্রা এবং কোনো ট্রেডার কী ধরনের বিশ্লেষণ ব্যবহার করে, মৌলিক নাকি কৌশলী, তারা কী উপাদান বিবেচনায় রাখে, কী ইন্ডিকেটর ও পরামর্শদাতা ব্যবহার করে এই সব ক্ষেত্রেই পৃথক হতে পারে। অবশ্যই, কোন বাজার (পণ্য, কারেন্সি, স্টক বা ক্রিপ্টো) এবং কোন সম্পদ নিয়ে ট্রেডার কাজ করছে। এবং অবশেষে (অথবা, হয়তো, প্রথমত) প্রতিটি নির্দিষ্ট লেনদেনের সময়ের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী কৌশল বিভাজিত হতে পারে। এবং এটা টিকতে পারে কয়েক মিলিসেকেন্ড থেকে বহু বছর পর্যন্ত।

হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং

এই ট্রেডিং পদ্ধতি সম্ভব হয়ে উঠেছে অটোমেটেড এক্সপার্ট অ্যাডভাইজর ও হাই স্পিড ইন্টারনেট আসার ফলে। কোনো ব্যক্তির, এমনকি অত্যন্ত-প্রতিক্রিয়া সহ, এই ক্ষেত্রে কিছু করার নেই, কেননা এটা কোনো অর্ডার ওপেন ও ক্লোজ করার মাঝে এক সেকেন্ডেরও কম সময় নেয়। এটা শুধু রোবট, যার অর্থ, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, যা সামান্যতম মূল্য ওঠানামাও ধরতে পারে। এবং এখানে অনেককিছু নির্ভর করে তাদের মধ্যে কী অ্যালগরাদিম রাখা হয়েছে এবং কোডারের নৈপুণ্যের ওপর।

কম্পিউটারের স্পিড এবং তথ্য ও কমান্ড সংবহনের স্পিডেরও পাশাপাশি একটি ভূমিকা রয়েছে। কম্পিউটার ও সার্ভার যতই ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের নিকটে যায় ততই ইন্টারনেট সংযোগ ভালো হয়, যার ফলে লাভ করার বেশি সুযোগ থাকে।

এইসঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে সব ব্রোকার এই ট্রেডিং পদ্ধতিকে স্বাগত জানায় না। এবং আপনি যদি এরকম একজন ব্রোকারকে খুঁজে পান, কখনো ভুলবেন স্পেড কমিশন সম্পর্কে। হাজার বা দশহাজার একদিনের যাই বাণিজ্য হোক না কেন সেটা আপনার চেয়ে এই ব্রোকারকে আরও ধনী করতে পারে।

Trading methods_big_bn

ইন্ট্রাডে : পিপসিং

প্রথমে, ইন্ট্রাডে ট্রেজিং কী। এগুলি হল স্বল্পমেয়াদি কৌশল যখন সব পজিশন একদিনের মধ্যে খোলে ও বন্ধ হয়। এটা স্পষ্ট যে ম্যানুয়াল ট্রেডিং বা অটোমেটিক ট্রেডিং উভয় ব্যবহৃত রোবট অ্যাডভাইজার এখান থেকে পরিচালনা করা যায়।

পিপসিং হল ইন্ট্রাডে ট্রেডিঙের জন্য সংক্ষিপ্ততম বিকল্প। অবশ্যই, এটা হাই-ফ্রিকোয়েন্সি ট্রেডিং নয়, কিন্তু নীতি সেই একই : মূল্যের স্বল্পমেয়াদি ওঠানামায় ওপর লাভের অন্তত কিছু পিপ (পয়েন্ট) আঁকড়ে ধরা। একজন পিপসিং ট্রেডার প্রতিদিন 50-এর বেশি ট্রেড করতে পারে, যা টিকতে পারে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত। এবং কাজটা মিনিটে এগোয় এবং এমনকি চার্টে টিক দেওয়াও।

যদি আমরা ম্যানুয়াল ট্রেডিং নিয়ে কথা বলি, এখানে ট্রেডারদের ওপর লোড অনেক বেশি : মনিটরে গোটা দিন, সঙ্গে রয়েছে স্নায়ুচাপ এবং প্রতিটি নতুন ট্রেডের রোমাঞ্চ – কখন খুলবে, কোন অভিমুখে, অনুমিত নাকি না। হ্যাঁ, এখানে প্রকৃতপক্ষে, বিভাজন এবং ভাগ্যের খেলা খুব কম নয়, বরং কৌশলী ও মৌলিক বিশ্লেষণের চেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে। ভুলে যাবেন না এক্ষেত্রে স্প্রেড ও কমিশনের ব্যাপারটা, এবং ক্রমবর্ধিত গতিময়তা সহ ইনস্ট্রুমেন্ট নির্বাচন করুন, যাতে মূল্য ওঠানামায় সর্বোচ্চ লাভ নিষ্কাশন করতে পারেন।

এর সঙ্গে, যেহেতু আমরা প্রতিটি বাণিজ্যে মাত্র কিছু পয়েন্ট অর্জন সম্পর্কে কথা বলছি, একজন ট্রেডারকে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে বৃহৎ লেভারেজ যাতে তাৎপর্যপূর্ণ লাভ করতে পারে। এবং এতে আপনার ডিপোজিট হারানোর ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, খুব খুবই কম সফল ট্রেডার পিপসিং ব্যবহার করে।

ইন্ট্রাডে : স্কালপিং ও ডে ট্রেডিং

যদি কেউ না জানে, স্কাল্প হল ত্বকের একটি অংশ চুলের সঙ্গে যা প্রাচীনকালে শত্রুর মাথা থেকে কেটে নেওয়া হত একটি ট্রফি হিসেবে। সুতরাং, ‘স্কালপিং’ পরিভাষা বোঝায় যে মূল্য ওঠানামা থেকে লাভের একটি পাতলা স্তর অপসারণ।

এটা শান্ত, কিন্তু তবু কিছুটা চাপযুক্ত এবং ট্রেডিঙের তীব্র উপায়, একদিনে গড়ে 10-30 বাণিজ্য সম্পূর্ণ করা যায়। এই হারে ট্রেডারের কাছে বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণের বেশি সময় থাকে (এর অন্তর্গত নতুন প্রত্যাশা ও পূর্বাভাস, প্রবণতা বিশ্লেষণ, সাপোর্ট/রেজিস্ট্যান্স স্তরের প্রতিজ্ঞাবদ্ধতা প্রভৃতি)। এই ব্যবধান ছাড়া, বাকি সবকিছুই পিপের মতো।

 

***

ঠিক আছে, এটাকে কোনো একটি পৃথক বিভাগে হাইলাইট না করে, আসুন আমরা এখানে কথা বলি ডে ট্রেডিং সম্পর্কে, যখন মোটামুটি 5-10 লেনদেন করা হয় একদিনে। এটা সম্ভবত বোধগম্য কোনো বিশেষ মন্তব্য ছাড়াই যে এই পদ্ধতি আগের পদ্ধতিগুলির চেয়ে কীভাবে পৃথক। আসুন আমরা মাত্র তিনটি পয়েন্ট নোট করি।

প্রথমত, যখন বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করা হয়, উচ্চতর সময়সীমা সহ চার্ট এখানে সাধারণত ব্যবহৃত হয় : M5, M15, M30। দ্বিতীয়ত, ট্রেডার নিম্নতর স্পেড ও কমিশনযুক্ত কম গতিময় ইনস্ট্রুমেন্ট ব্যবহার করতে পারে। এবং তৃতীয়ত, তাদের ইতিমধ্যে পরিস্থিতি ও হেজ রিস্ক ব্যবহৃত সম্পদ যা মূল ট্রেডেড ইনস্ট্রুমেন্টের সঙ্গে জড়িত সরাসরি বা বিপরীত সমন্বয়ে তা বিশ্লেষণের সময় আছে।

মধ্যমেয়াদি ট্রেডিং

এরকম ট্রেডারদের অনেক সময় বলা হয় স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগকারী যদি তারা দীর্ঘ যায়। এবং যদি পজিশন ছোট থাকে, সম্ভবত তাদের বলা হয় বিনিয়োগ-বিরোধী। যদিও আরেকটা পরিচিত নাম আছে : বুলস ও বিয়ার্স।

এটা সরাসরি উল্লেখ করতে হবে যে ‘গড়’ পর্বের সংজ্ঞায় বৈষম্য আছে। খুব বেশিদিন আগে নয়, এটা মনে করা হত যে এটা হল সময় বিরত কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত। যদিও, একুশ শতকের গতি ও টেকনোলজিক্যাল সামর্থ্য এই সত্যে নিয়ে গেছে যে ‘মধ্যমেয়াদি কৌশল’-এর ধারণা এখন ব্যাখ্যাত হয় কয়েকদিন থেকে কয়েক মাস, কয়েক মাসের কম সময়পর্বে একটি ওপেন পজিশন ধরে রাখতে।

এই ধরনের স্ট্র্যাটেজির একটি অপরিহার্য সুবিধা হল ট্রেডারকে ধারাবাহিকভাবে বর্তমান মূল্য নিরীক্ষণ করতে হয় না এবং এখানে গভীর মৌলিক ও কৌশলী বিশ্লেষণের সুযোগ আছে, যা বিশেষ করে অনভিজ্ঞ নবাগত ও জুয়াড়িদের জন্য উপকারী যারা আবেগের বশবর্তী হওয়ার প্রবণতা থাকে।

কেউ কয়েকশো এমনকি কয়েক হাজার পয়েন্ট লাভ করতে পারে মধ্যমেয়াদি প্রবণতার পর। পাশাপাশি একই সময়ে, ট্রেডারের কাছে সুযোগ থাকে তাদের পজিশন ‘টপ আপ’ করার স্বল্পমেয়াদি অ্যাডজাস্টমেন্ট ও স্বল্পস্থায়ী প্রাইস রোলব্যাকের ক্ষেত্রে, কোনো বড় লেভারেজ ব্যবহার না করে।

দ্বিধাহীনভাবে, ব্রোকারকে যে স্প্রেড ও কমিশন দেওয়া হয়েছে এক্ষেত্রে সেটা উপর্যুক্ত ক্ষেত্রগুলির চেয়ে অনেক গুণ কম। যদিও, এখানে আরেকটি খরুচে বিশয়ের উদয় হয় : সোয়াপ, পরের দিনের জন্য একটি ওপেন পজিশনে ক্যারিং ওভারের জন্য একটি অ্যাক্রুয়াল বা উইথড্রয়াল অপারেশন। এটা যখন একদিনের জন্য পিছিয়ে যায় তখন ততটা উল্লেখযোগ্য নয়। কিন্তু যদি ট্রেডার কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাসের জন্য অর্ডার ক্লোজ না করে, অনেক বড় অঙ্ক জড়ো করতে পারে। সুতরাং, যখন মধ্যমেয়াদি (এবং এমনকি অনেকটা দীর্ঘমেয়াদি) ট্রেডিঙে জড়াবেন, এটা আবশ্যক সঠিক ইনস্ট্রুমেন্ট পছন্দ করা যা হবে  কম নেতিবাচক বা (এমনকি আরও ভালো) ইতিবাচক সোয়াপ।

দীর্ঘমেয়াদি ট্রেডিং

বহু আর্থিক বাজার গুরু বিশ্বাস করে যে নবাগতদের জন্য স্বল্পমেয়াদি স্ট্র্যাটেজি মজার। পেশাদাররা জড়িত থাকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে। (বলাবাহুল্য ওয়ারেন বুফোর মতো কিংবদন্তির কথা স্মরণ করতে হয়, যদি যা শেয়ার কিনেছিলেন সেগুলির অবমূল্যায়নের জন্য অপেক্ষা করতে পারেন এবং কোম্পানিগুলিকে প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন কয়েক বছরে বিকাশ লাভের জন্য।)

এই ধরনের ট্রেডিং সবচেয়ে বেশি হয় বিনিয়োগ করতে। এখানে, ট্রেডারের অগ্রাধিকার বিনিয়ম হারের ব্যবধানের অনুমান থেকে লাভ করা নয়, বরং তারা যে সম্পদ দখল করেছে সেগুলির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া, পাশাপাশি শেয়ার ও অন্যান্য সিকিউরিটিজ থেকে ডিভিডেন্ড লাভ করা। (যদিও, যদি আপনি আরেক কিংবদন্তিকে মনে করেন, জর্জ সরোস, তাহলে বিয়ার মার্কেটেও কেউ বিলিওনিয়ার হতে পারে)। এটা মনে হচ্ছে যে দীর্ঘমেয়াদি ট্রেডিঙের সুবিধা হল এই যে এখানে কোনো ‘রেলেস’ নেই এবং পরিস্থিতি বেশ ধীরে উন্নত হচ্ছে। কিন্তু এটা এরকম নয়। অনেক অনুমিত ও অভাবনীয় পরিস্থিতি দীর্ঘ সময়ের ভেতরে উদ্ভূত হতে পারে, এর মধ্যে রয়েছে, উদাহরণস্বরূপ, রাজনৈতিক পরিস্থিতির দ্রুত পরিবর্তন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা মহামারি। এবং কোনো সম্পদ মালিকানার ক্ষেত্রে পৃথিবীতে কয়েক মাসে এবং কয়েক বছরে অনেক কিছুই ঘটতে পারে।

এবং অবশ্যই, দীর্ঘমেয়াদি ট্রেডিঙে, বেশ বড় পুঁজি দরকার, এর পাশাপাশি অনেক ধৈর্যও প্রয়োজন, এবং কারো এটা ভাবা ঠিক নয় যে এক ঝটকায় সব আর্থিক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

 

***

আমরা আর্থিক বাজারে ট্রেডিঙের জন্য বিকল্পের তালিকা করেছি, যা বিভিন্ন সময়সীমায় সমাপ্ত। এর প্রতিটির আছে সুবিধা ও অসুবিধা। এটা আপনার জন্য কসমিক প্রফিট আনতে পারে অথবা এবং এটা আপনার অস্তিত্বের শেষ উপায় থেকেও বঞ্চিত করতে পারে। সেজন্যই, এগুলির কোনো একটা (বা কয়েকটা) পছন্দের আগে, আমাদের দৃঢ় পরামর্শ হল আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পেশাদারি জ্ঞান ও নৈপুণ্য অর্জন করতে হবে এবং অগ্রিম সেই অঙ্ক জমা করুন যা আপনি ব্যর্থ হলে সামাল দিতে তৈরি। যদিও, অবশ্যই, আমরা একমাত্র আপনার সাফল্য কামনা করি।

ফিরে যান ফিরে যান
এই ওয়েবসাইটটি কুকি ব্যবহার করে। আমাদের কুকি নীতিমালা সম্পর্কে আরও জানুন।