প্রথমেই গত সপ্তাহের ঘটনাবলির পর্যালোচনা:
- ইউরো/ইউএসডি. এপ্রিলের শেষ সপ্তাহের প্রধান ঘটনা তিনটি: ফেড-এর বৈঠক, সেই সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোজোনের জিডিপি সংক্রান্ত তথ্যাদি প্রকাশ।
ইউএস ফেড-এর বৈঠকের যে ফলাফল পাওয়া গেছে তা প্রত্যাশিতই ছিল। সুদের হার 0.25%-এই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং প্রোগ্রাম (QE)-এর আয়তন মাসিক 12 হাজার কোটি ডলারই হয়ে আছে। এদিকে, এই নিয়ামক সংস্থার প্রধান জেরোম পাওয়েল যা বলেছেন, তা প্রায় মিলে গেছে আমাদের পূর্ববর্তী পূর্বাভাসের সঙ্গে। তিনি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়ালেও এখনই আর্থিক সঞ্জীবনী কর্মসূচিতে কাটছাঁট করার কথা বলাটা মোটেও ঠিক হবে না। পাওয়েলের মতে, এখন পর্যন্ত সবকিছুই খুবই নড়বড়ে অবস্থায় আছে, মুদ্রাস্ফীতি হয়েই চলেছে, যদিও এটা সাময়িক, এবং কর্ম সংস্থান হয়েছে 85 লক্ষ মানুষের, যা কিনা 2020-র ফেব্রুয়ারির চেয়ে কম।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপি প্রথম ত্রৈমাসিকে পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি ছিল এবং এই হার 6.4% (পূর্ববর্তী ত্রৈমাসিকে ছিল 4.3%)। 1984-র পর এই প্রথম এমন দুর্দান্ত গতিশীলতা দেখতে পাওয়া গেছে। আর্থিক সংকটের যুগের আগে জিডিপি যে-উচ্চতায় ছিল, সেখানে দেশের অর্থনীতিকে পৌঁছতে মাত্র দরকার আর এক শতাংশ। সম্ভবত, জুলাইয়ের আগেই জিডিপি সেই সূচকে পৌঁছে যাবে।
এমন মজবুত পরিসংখ্যানের জন্যই মার্কিন কোষাগার ভরে উঠেছে। তা সত্ত্বেও সপ্তাহ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত ডলার ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি; কেননা, ইউরোপীয় বন্ডগুলিরও দাম উঠছিল। জার্মানির 10 বছরের ঋণের হার 2020-র মার্চের পর সর্বাধিক হয়েছে।
আর্থিক সংকটের যুগের আগের সূচকে দ্রুতগতিতে পৌঁছনোর নিরিখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় সংঘের মধ্যে থাকা ব্যবধান হয়তো শীঘ্রই কমে আসবে। গত 28 এপ্রিল ইসিবি-র সভাপতি ক্রিস্টিন লাগার্ড বলেন, “সুড়ঙ্গ পার করলেই যে আলোর দেখা মিলবে, তার আভাস ইতিমধ্যে আমরা পেয়ে গেছি। ইউরোপীয় সংঘে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি অনেক বেশি দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।” তিনি এ-ও বলেন যে, বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর গতি বৃদ্ধি পাবে।
উপরে উল্লেখ করা ঘটনাগুলোর ফলে ইউরো/ইউএসডি-র উত্থান-পতনের লড়াই গোটা সপ্তাহ জুড়ে চলেছে কিছুটা সাফল্যের সঙ্গে। মুদ্রাস্ফীতির তীব্র আশঙ্কার চাপ সহ্য করতে হবে ডলারকে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অর্থনীতিতে বিপুল অর্থের জোগান দিয়েই চলেছেন। কংগ্রেস ইতিমধ্যে 1 লক্ষ 90 হাজার ডলারের অর্থনৈতিক সঞ্জীবনী কর্মসূচির ব্যাপারে কংগ্রেসের অনুমোদন পাওয়া গেছে, এরপর আসতে চলেছে পরিকাঠামো উন্নয়নে 2 লক্ষ 20 হাজার 500 ডলার এবং সামাজিক সহায়তায় 1 লক্ষ 80 হাজার ডলার। মার্কিন প্রশাসনের এইসব পদক্ষেপের ফলে ডলার নীচে নেমেছে এবং ইউরো/ইউএসডি জুটি 21 এপ্রিল বৃহস্পতিবারে দু’মাসের মধ্যে আরও একবার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে 1.2150 হয়েছে।
ইউরোপীয় সংঘ যে ম্যাক্রো পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে তা খুব আশাপ্রদ নয় বলে শুক্রবারে জমি হাতছাড়া হয়ে গেছে ইউরোপীয় মুদ্রার। 30 এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রেজারি বন্ডের প্লেসমেন্টের নিলামের মাধ্যমে ডলারকে অতিরিক্ত উদ্দীপিত করা হয়েছে। ইউএস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট সেখানে 13 হাজার 60 কোটি ডলার মূল্যের ডেট সিকিউরিটি বিক্রি করেছে। আর্থিক ব্যবস্থার মধ্য থেকে এইভাবে লিকুইডিটি প্রত্যাহার করে আমেরিকার মুদ্রায় অতিরিক্ত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এর ফলে এই জুটি সপ্তাহের শুরুতে যেখান থেকে শুরু করেছিল, পাঁচ দিন পুরো হওয়ার পর তার থেকে অনেক নীচে ছিল, এবং এই মাত্রা নেমে হয়েছে 1.2020। - জিবিপি/ইউএসডি. এই জুটি নিয়ে গত সপ্তাহের পূর্বাভাসে 45 শতাংশ বিশেষজ্ঞ উত্থানের পক্ষে মত দিয়েছেন, 35 শতাংশ ছিলেন পতনের পক্ষে এবং বাকি 20 শতাংশের মত ছিল, এর যোগান ও চাহিদা প্রায় সমান থাকবে।
বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ (45 শতাংশ) যা প্রত্যাশা করেছিলেন, সেই অনুযায়ী প্রথম চারদিন পাউন্ড নিজের অবস্থান মজবুত করছিল; এবং বিনিয়োগকারীরাও এই আশা করতে শুরু করেছিলেন যে, জিবিপি/ইউএসডি জুটি আরও একবার 1.4000 মাত্রাকে পার করে গিয়ে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হবে। ঠিক যেমনটা হচ্ছিল 2020-র মার্চ থেকে 2021-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। অবশ্য এই জুটি 1.3975 পর্যন্ত পৌঁছনোর পরেই এই গতি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং পতনের গতি তীব্র হয়েছিল এবং সপ্তাহের একেবারে শেষের দিকে এতে ধস নামে। ঠিক যেমনটা আশঙ্কা করেছিলেন 35 শতাংশ বিশ্লেষক। ইউএস ট্রেজারি যে নিলামের আয়োজন করেছিল, তার ফলে এই জুটি 1.3800 প্রান্তের স্থানীয় নিম্ন মাত্রায় গিয়ে পড়েছে। এরপর বার দুয়েক সামান্য উঠেও শেষ পর্যন্ত থামে 1.3810-এ। যাকে গত 9 সপ্তাহের পিভট পয়েন্ট বলা যেতে পারে। তাহলে যে 20 শতাংশ বিশেষজ্ঞ এই জুটির জোগান ও চাহিদা একই থাকবে বলে মত দিয়েছিলেন, তাঁদের কথাও থাকল। - ইউএসডি/জেপিওয়াই. আগেই বলা হয়েছে, মার্কিন সরকারি বন্ড থেকে যা আয় হয়েছে, সেটাও এই জুটির মূল সূচক হয়ে রয়েছে। এটা গত সপ্তাহ জুড়ে বাড়ছিল। এর পাশাপাশি ডলারের দাম ইয়েনের তুলনায় বেড়েছিল। এর ফলে, ইউএসডি/জেপিওয়াই জুটি 109.00 মাত্রার উপরে উঠে, 145 পয়েন্ট যোগ করে দিনের শেষে হয়েছে 109.30।
- ক্রিপ্টোকারেন্সি. সাতদিন আগে পূর্বাভাস দেওয়ার সময় আমরা লিখেছিলাম, গত সপ্তাহে বিটিসি/ইউএসডি-র যে উত্থান হয়েছিল, তার লক্ষ্য হবে এই জুটিকে 50 হাজার ডলারের মধ্যে রাখা। সমস্যা হলেও সেটা করতে তারা সমর্থ হয়েছে। 25 এপ্রিলে এই জুটি পড়ে গিয়ে 47 হাজার ডলার হলেও, তারা ফের 50 থেকে 55 হাজারের জায়গায় উঠে গেছে। বিনিয়োগকারী ও ফাটকাবাজরা কম দামে বিটকয়েন কিনে নিচ্ছেন, আগামীতে এর থেকে লাভ পাওয়ার আশায়। ক্রিপ্টো বাজারের মোট ক্যাপিটালাইজেশন 24 এপ্রিলে ছিল 1. 750 ট্রিলিয়ন ডলারে, এবং ওই মাসের শেষ দিনে তা ইতিমধ্যেই পৌঁছেছে 2.110 ট্রিলিয়ন ডলারে।
কিছু খবরের ফলে খুব বেশি না-হলেও উত্থান হয়েছে। তাই কয়েন ডেস্ক-এর নামক নিউজ পোর্টাল এই খবর প্রকাশ করেছে যে, আমেরিকার বৃহৎ আর্থিক সংস্থা জেপিমরগ্যান অবশেষে বিটকয়েনের উপর গুরুত্ব দিয়ে নতুন ফান্ড তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাংবাদিকরা জেনেছেন যে, বিটকয়েন ফান্ড কাজ করতে শুরু করবে এই গ্রীষ্মে।
বিটকয়েন-ইটিএফ শুরু হওয়ায় তা আরও এক সহায়ক দিক হয়ে উঠতে পারে। এদিকে অবশ্য, ভ্যানএক নিয়ে ইউএস সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) তাদের সিদ্ধান্তকে মুলতুবি রেখেছে জুন মাস পর্যন্ত। এই মুহূর্তে, ইটিএফ শুরু করার জন্য মোট 10টি আবেদন জমা হয়েছে, এবং নিয়ামক সংস্থা জানিয়েছে, এগুলো নিয়ে বিচার-বিবেচনা করার জন্য তাদের আরও সময় লাগবে।
তাই মূল ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রায় 50,000 ডলারের মধ্যে থেকে গিয়েছে। কিন্তু তা 50 দিনের গড় গতিবিধির উপর উঠতে পারেনি। যা কিনা 2020-র অক্টোবর থেকে বিটিসি/ইউএসডি জুটির জন্য একনাগাড়ে সহায়তা করে যাচ্ছে। এই জুটি যত অচলাবস্থার দিকে এগিয়েছে, ততই ক্রেতার সংখ্যাও অনেকটা কমে যেতে শুরু করেছে। এটা কিন্তু বিনিয়োগকারীদের জন্য একটা বিপদ সংকেত বটে। এই জুটি এখন 51 পয়েন্টে আছে এবং তা নিয়ে বাজার যে চিন্তিত তা নিশ্চিত করেছে নিরপেক্ষ অঞ্চলের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ক্রিপ্টো ফিয়ার অ্যান্ড গ্রিড ইনডেক্স।
আমরা বারে-বারে বলে এসেছি যে, ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে এই ধরনের অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বহু বিনিয়োগকারীই অল্টকয়েনের দিকে ঝুঁকছেন। বিটকয়েনের ক্রমশ জমি হাতছাড়া হচ্ছে। মোট ক্যাপিটালাইজেশনে এর অংশ 2 জানুয়ারিতে 72.65 শতাংশ এবং 23 এপ্রিলে 50.70 শতাংশ হয়ে থাকলে, এ মাসের শেষে তা আরও নীচে চলে যায়, যা কিনা 2018-র জুলাইয়ের পর থেকে সর্বনিম্ন মাত্রায় চলে গেছে এবং তার 47.87 শতাংশ।
অন্যদিকে, এথিরিয়ামের প্রতি আকর্ষণ ক্রমশ বাড়ছে। কয়েনমেট্রিক্স গণনা করে দেখিয়েছে যে, এথিরিয়াম নেটওয়ার্কে হ্যাশরেট গত 100 দিনে বেড়েছে 89 শতাংশ। ইটিএইচ/ইউএসডি জুটির অবস্থা বিটকয়েনের মতো হয়নি, এই জুটি বারে-বারে উঁচুতে উঠে ইতিহাস গড়ে গেছে। 29 এপ্রিলে তারা 2,790 ডলারের উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতামতকে একত্রিত করে, সেই সঙ্গে বিভিন্ন কারিগরি ও ভৌগোলিক বিশ্লেষণ পদ্ধতির ভিত্তিতে পূর্বাভাস তৈরি করে আসন্ন সপ্তাহের পূর্বাভাস সম্পর্কে আমরা নিম্নলিখিত কথাগুলি বলতে পারি:
- ইউরো/ইউএসডি. অতিমারির সময় বিনিয়োগকারীদের কাছে সবচেয়ে সুরক্ষিত মাধ্যম হয়ে উঠেছিল ডলার। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ডলার দুর্বল হয়ে গেছে। মুদ্রাস্ফীতি 2.4 শতাংশের চেয়েও বেশি হয়ে গেছে, যা কিনা 2013-র পর থেকে সবচেয়ে বেশি। বিপুল আর্থিক সহায়তার ফলে মার্কিন জিডিপি রেকর্ড মাত্রায় বৃদ্ধি হওয়া উচিত। যার ফলে ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতা বাড়বে এবং বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বাজারের দিকে আকর্ষিত হবেন। ডাও জোন্স মার্কেট ডেটা অনুযায়ী, জো বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম 100 দিনে এসঅ্যান্ডপি500 বেড়েছে 11 শতাংশ। 1933-এ ফ্র্যাঙ্কলিন রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ের পর থেকে এটাই সবচেয়ে ভাল ফল। 1929-এর পর থেকে এই উত্থান বার্ষিক হিসাব অনুযায়ী গড়ে 3.2 শতাংশ।
অন্যদিকে, মার্কিন অর্থনীতি বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালী বলে নিজেকে সহ অন্যান্য দেশের অর্থনীতিকেও তুলে ধরবে, এবং দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর পথে থাকা ব্যবধানও ঘুচিয়ে দেবে। মার্কিন ট্রেজারি বন্ড থেকে আয় বাড়িয়ে ডলারকে সাহায্য করতে হবে।
এখন পর্যন্ত আসন্ন সপ্তাহের পূর্বাভাস দিতে গিয়ে 60 শতাংশ বিশেষজ্ঞের আশা ইউরো/ইউএসডি জুটি ফের উপরে ওঠার চেষ্টা করবে। নিকটতম রেজিস্টেন্স হল 1.2055 ও 1.2100। লক্ষ্য হল, 29 এপ্রিলের উচ্চ মাত্রা 1.2150-তে পৌঁছনো। এই পূর্বাভাসে সম্মত হয়েছেন 70 শতাংশ অসিলেটর এবং ডি1 সংক্রান্ত ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরের 75 শতাংশ। বাকি 30 শতাংশ অসিলেটর নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছেন।
সাপ্তাহিক থেকে মাসিক পূর্বাভাসের দিকে আসার পর দেখা যাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের মতামত প্রচণ্ড ভাবে পরিবর্তিত হয়। এই ক্ষেত্রে তাঁদের 75 শতাংশ অপেক্ষা করছেন যে ডলার মজবুত হবে এবং এই জুটি 1.1900 জোনে নেমেছে, এবং পরে আরও 100 পয়েন্ট নীচে নেমেছে। এখন এই পতনের লক্ষ্য হল 31 মার্চের নিম্ন মাত্রা 1.1704-এ পৌঁছনো।
ডি1-এর রৈখিক বিশ্লেষণ এই ইঙ্গিত দেয় যে এই জুটির গতিশীলতা 1.1945-1.2150 ট্রেডিং রেঞ্জে থাকবে। এর পাশাপাশি, এইচ4 সংক্রান্ত পর্যালোচনা অনুযায়ী, এই জুটি প্রথমে একেবারে নীচের সীমায় নেমে যাবে, তারপর আবার উঠতে থাকবে।
আসন্ন সপ্তাহের ঘটনাগুলোর মধ্যে লক্ষণীয় বিষয়টি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতকরণ (3 মে) ও বেসরকারি (5 মে) বিভাগ সংক্রান্ত আইএসএম বিজনেস অ্যাক্টিভিটি ডেটা প্রকাশ। সেই সঙ্গে আমরা ইউএস এমপ্লয়মেন্ট ডেটারও অপেক্ষা করছি। এডিপি রিপোর্ট প্রকাশিত হবে 5 মে, বুধবার এবং কৃষি ক্ষেত্র (NFP)-র বাইরে নতুন কত রোজগার সৃষ্টি হল তা জানা যাবে 7 মে, শুক্রবার।
ইউরোপীয় উপভোক্তা বাজার 3 ও 6 মে তারিখে বিনিয়োগকারীদের আনন্দ দিতে পারে। পূর্বাভাস বলছে, জার্মানিতে খুচরো বিক্রিতে পতনের হার -9.0 শতাংশ থেকে নেমে হবে 3.15 শতাংশ। ইউরোজোনে খুচরো বিক্রি সামগ্রিক ভাবে -2.9 শতাংশ থেকে বেড়ে + 9.4 শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। - জিবিপি/ইউএসডি. ব্রিটিশ মুদ্রার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি হল 6 মে, বৃহস্পতিবারে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ডের বৈঠক বসতে চলেছে। এই বৈঠিকে শুধুমাত্র মুদ্রা নীতি নিয়ে আলোচনা হবে। সুদের হার সম্ভবত 0.1 শতাংশেই অপরিবর্তিত থাকবে। কোয়ান্টিটিভ ইজিং অনুযায়ী, সরকারি বন্ড কেনার পরিমাণ 895 বিলিয়ন ডলার থেকে কমে 875 বিলিয়ন ডলার হয়ে যেতে পারে। যদি তা হয়, তাহলে, বাজার এই সংকেত পাবে যে, ব্রিটিশ এই নিয়ামক সংস্থা নিজের নীতিকে কঠোর করতে শুরু করবে।
দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে এই ব্যাঙ্ক যে-পূর্বাভাস দিয়েছিল, তা-ও সংশোধন করতে পারে। এর নানা কারণ আছে। প্রথম ত্রৈমাসিকে গ্রেট ব্রিটেনের বেকারত্ব 5.0 থেকে 0.1 শতাংশ কমে 4.9 শতাংশ হয়েছে। দেশে ইতিমধ্যে প্রায় 3 কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। এঁদের মধ্যে 25 লক্ষ মানুষ কোভিড-19 রোধক টিকার 2টি ডোজ পেয়েছেন। কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত কিছু-কিছু বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এগুলো সবই পাউন্ডের জন্য ইতিবাচক হয়ে উঠেছে এবং এসবের জন্যই হয়তো জিবিপি/ইউএসডি ফের ঊর্ধ্বমুখী হবে। এটা নিশ্চিত করেছে এইচ4 ও ডি1 সংক্রান্ত রৈখিক বিশ্লেষণের পূর্বাভাস।
টেকনিক্যাল ইন্ডিকেটরের রিডিং অনুযায়ী ডি1-এ এই জুটিকে স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। কেননা, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এর জোগান ও চাহিদা একই থেকেছে। এইচ4-এ স্বাভাবিক ভাবেই অধিকাংশ বিশেষজ্ঞই লাল সংকেত দেখছেন। অবশ্য 25 শতাংশ অসিলেটরের মতে, এই জুটি ওভারসোল্ড হবে।
60 শতাংশ বিশেষজ্ঞের মতে, এই জুটি অন্তত 1.4000 মাত্রা পর্যন্ত উঠবে। যদি এই জুটি সেই মাত্রাকে পার করে যেতে পারে, তাহলে তাদের পরবর্তী লক্ষ্য হবে 1.4240। নিকটতম রেজিস্টেন্স লেভেলগুলো হল 1.3860, 1.3925 ও 1.3975।
বিশ্লেষকদের বাকি 40 শতাংশ বলছেন, এই জুটি নিম্নমুখী হবে। এই জোনে মূল সাপোর্ট হল 1.3670-1.3700। এরপর -1.3600। - ইউএসডি/জেপিওয়াই. এক সপ্তাহ আগে যা বলা হয়েছিল তার সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে গেছে বিশেষজ্ঞদের মত। তাঁদের 70 শতাংশ মনে করেন, এই জুটি ফের পতনমুখী হবে, যা 109.00 প্রান্তের নীচে থাকবে। পরবর্তী সাপোর্টগুলি হল 108.40 ও 107.45। বাকি 30 শতাংশ বিশ্লেষকদের মতে, এই জুটি ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হবে। রেজিস্টেন্স থাকবে 110.00-এ। এর লক্ষ্য হল আরও 100 পয়েন্ট উঠে 111.00 পর্যন্ত যাওয়া।
ইন্ডিকেটরদের মতে, 75 শতাংশ অসিলেটর এবং এইচ4 সংক্রান্ত ট্রেন্ড ইন্ডিকেটরের 100 শতাংশ, এবং যথাক্রমে, ডি1 সংক্রান্ত 70 শতাংশ ও 95 শতাংশ সবুজ সংকেত দিয়েছেন। বাকি অসিলেটর সংকেত দিচ্ছেন যে এই জুটি ওভারবট হবে। দুই সময়সীমার রৈখিক বিশ্লেষণ এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, এই জুটির পতন 107.45 লেভেল পর্যন্ত হবে। - ক্রিপ্টোকারেন্সি. এই পর্যালোচনার প্রথম পর্বেই বলা হয়েছিল যে, বিটিসি/ইউএসডি জুটি এপ্রিলের শেষ দিনে 50 দিনের গড় গতিশীলতাকে পার করতে পারেনি। এটা দেখে কিন্তু বিনিয়োগকারীদের সজাগ হতে হবে। বিশেষ করে এই কারণে যে, সীমারেখারও নীচে এই জুটির পড়ে যাওয়াটা গত বছর অক্টোবরের শুরুর পর থেকে প্রথমবার হল। সেই সময় এই জুটি 10,000 ডলারের লেভেল পার করেছিল।
বিটকয়েন ডমিন্যান্স সূচকও 50 শতাংশের নীচে চলে গেছে, যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে আকর্ষিত করেছে, গোটা ক্রিপ্টো বাজারকে লোকোমোটিভের মতো টেনে নিয়ে গেছে।
এই দু’টি দিককে একসঙ্গে বিচার করে বেশ কয়েক জন বিশ্লেষক এটাকে 2018-র জানুয়ারির পরিস্থিতির সঙ্গে মেলাচ্ছেন। সেই সময় ক্রিপ্টোর বাজার ক্রমশ ঠান্ডা হতে শুরু করেছিল।
কিন্তু নিরাশাবাদীদের পাশাপাশি আশাবাদীদের কণ্ঠও সাধারণত শোনা যায়। তাই স্টক-টু-ফ্লো মডেলের ক্রিয়েটর, প্ল্যানবি নামক জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশ্লেষক মনে করেন, বিটকয়েনের বর্তমান পতন কিছুটা স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিতও বটে। যা কিনা এটাই নিশ্চিত করছে যে এটা ঊর্ধ্বমুখী হবেই। এই বিশ্লেষক একটি কথা জোর দিয়ে বলেছেন যে, একনাগাড়ে শুধু উঠতেই থাকবে এমনটা আশা করা ঠিক নয়, কখনও-কখনও পড়ে গিয়ে আবার উঠে দাঁড়ানোর ঘটনাও দেখতে পাওয়া যায়। “পড়ে গিয়ে ফের উঠে না-দাঁড়ালে কোনও কিছুরই সঠিক বিকাশ হয় না। বিটকয়েন ইতিমধ্যে টানা 6 মাস ধরে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এরকমটাই আমরা দেখেছিলাম 2013 ও 2017-য় মিড-সাইকেল কারেকশনের সময়।”
প্ল্যানবি এমনও মন্তব্য করেছে যে, “কিছু দূর পর্যন্ত বাজার শান্ত হয়েছে।” এই বাজার খুব গরম হয়ে উঠেছিল, এখন সামান্য ‘ঠান্ডা’ অবস্থার অপেক্ষায় আছে। সেই সঙ্গে, প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সির রেট বর্তমানে এস2এফ মডেলের প্রত্যাশার চেয়ে কম হয়েছে। এর অর্থ, এটা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হবে।
ভেঞ্চার ক্যাপিট্যাল ফার্ম প্যান্টেরা ক্যাপিট্যাল-এর সিইও ড্যান মোরহেডও ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছেন। এই ব্যাবসায়ীর মতে, বিটিসি-র আরও ঊর্ধ্বমুখী হওয়াটাই ভবিতব্য। কেননা ক্রমশ অনেক বেশি সংখ্যক বিনিয়োগকারী এ কথা বুঝতে পারছেন যে, চিরাচরিত মাধ্যমের বদলে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে পুঁজি মজুত করে রাখাটা অনেক বেশি কার্যকর।
প্যান্টেরা ক্যাপিট্যালের প্রধানের করা গণনা অনুযায়ী, প্রত্যেক বার 10 লক্ষ নতুন ইউজার এই নেটওয়ার্কে নাম নথিভুক্ত করালেই বিটকয়েনের মান 200 ডলার বাড়তে থাকবে। এই ধরনের গতিশীলতা অব্যাহত থাকলে 2022-এ ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য 200,000 ডলারের সীমা ছুঁয়ে নেবে বা তা পার করে চলে যাবে।
ড্যান মোরহেডের মতে, বিটকয়েন যে ক্রমশ প্রসার লাভ করছে, তার পিছনে থাকা অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হল, এখন বহু মানুষের হাতেই স্মার্টফোন রয়েছে। সারা পৃথিবীতে এই মুহূর্তে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি মানুষের কাছে এই ধরনের
ডিভাইস আছে। এর ফলে বিটকয়েন যে-কোনও সময়ে সব জায়গায় উপলব্ধ হয়ে উঠছে।
নর্ড এফএক্স অ্যানালিটিক্যাল গ্রুপ
সতর্কীকরণ: এখানে যা বলা হয়েছে তা বিনিয়োগ সংক্রান্ত পরামর্শ নয় বা আর্থিক বাজারে কাজ-কর্মের কোনও পথ-নির্দেশ নয়। এসব কথার উদ্দেশ্য শুধু তথ্যের যোগান দেওয়া। আর্থিক বাজারে লেনদেন করাটা বেশ ঝুঁকির ব্যাপার এবং এখানে জমা করা পুরো টাকাই জলে চলে যেতে পারে।
ফিরে যান ফিরে যান