অর্থনৈতিক বাজারে ট্রেডিং শুধুমাত্র চার্টের বিশ্লেষণ এবং কৌশল অনুসরণ করাই নয়, বরং সেইসাথে গুরুতর মানসিক কাজও।এই আর্টিকেলে, আমরা ট্রেডারদের প্রধান ভয় এবং কীভাবে সেটি থেকে বেড়িয়ে আসতে হয় সেটির অন্বেষণ করব, আপনি একজন ট্রেডার হওয়ার জন্য যে প্রস্তুত সেটি কীভাবে নির্ধারণ করবেন সেই সম্মন্ধে আলোচনা করব, এবংঅর্থনৈতিক বিশ্বের গুরু এবং প্রভাবশালীদের সুপারিশগুলিও ভাগ করে নেবো।
ট্রেডারদের প্রাথমিক ভয় এবং কীভাবে সেইগুলি অতিক্রম করবেন
ট্রেডাররা কি থেকে সবথেকে বেশী ভয় পেয়ে থাকেন? মনোবিজ্ঞানীরা চারটি প্রাথমিক ভয় চিহ্নিত করেছেন। যদিও সবথেকে বিস্তৃত ভয়টি হয় অর্থ হারিয়ে ফেলার ভয়। সেইসাথে রয়েছে সুযোগ হারিয়ে ফেলার ভয়, অথবা অন্য কথায় বলতে হলে, সম্ভাব্য লাভজনক লেনদেন সুযোগ হারিয়ে ফেলার ভয়। তৃতীয়ত, ভুল করার ভয়ও রয়েছে, যার অর্থ হল তথ্যের ভুল ব্যাখ্যার আশঙ্কা অথবা একটি ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া। এবং সর্বশেষে, সহযোগী ট্রেডারদের অথবা বিনিয়োগকারীদের দ্বারা ভূল ব্যাখ্যা বা সমালোচিত হওয়ার চিন্তা। এটিকে আমরা বলতে পারি সমালোচনার ভয়।
কীভাবে একজন এই সকল প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করবে? নিঃসন্দেহে, শিক্ষা এবং পেশাদারি ট্রেনিং একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে: আপনি বিষয়টিকে যতো ভালোভাবে বুঝবেন, সেটি সম্মন্ধে আপনার ভয় ততোই কম হবে। মনে করুন, ওয়ারেন বাফেট সুপারিশ করছেন আপনি যা বুঝতে পারছেন তাতেই বিনিয়োগ করুন এবং আতঙ্কের কাছে আত্মসমর্পন করবেন না। এই উপদেশ অবশ্যই অনুসরণ করা যেতে পারে, কারণ বাফেট হলেন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় এবং সবথেকে জনপ্রিয় বিনিয়োগকারী, ফোবস অনুযায়ী যার মোট অর্থের পরিমাণ $100 বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। টিমোথি সাইকস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম যুব সফল ট্রেডার, সবসময় শিক্ষার গুরুত্ব এবং ক্রমাগত স্ব-উন্নতির প্রতি মনোনিবেশ করে থাকেন, যিনি $12,000-কে $2 মিলিয়ন-এ পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশ্ব-বিখ্যাত ট্রেডার এবং বিনিয়োগকারী, জর্জ সোরস, আপ্রত্যাশিত অবস্থার জন্য তৈরি থাকার এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতি মানিয়ে নেওয়ার সুপারিশ করে থাকেন। ভুল করার ভয় এবং সমালোচনা সম্মন্ধে কথা বলতে, এই বিলিয়নেয়ার বলেছেন: "অর্থনৈতিক বাজার, আমরা যতোই এটির পূর্বাভাস করার চেষ্টা করি না কেন, এটি সবসময় বিস্ময়ে পূর্ণই থাকবে। […] অন্যদের জন্য, ভুল করা লজ্জার ব্যাপার; আমার কাছে, আমার ভুলগুলো চিহ্নিত করা গর্বের ব্যাপার"। এখানে, সোরস-এর আরও একটি কথা বলা যেতে পারে: “আপনি সঠিক না ভুল সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, কিন্তু আপনি যখন সঠিক তখন কতো অর্থ উপার্জন করছেন এবং যখন ভুল তখন কতো অর্থ হারাচ্ছেন সেটা গুরুত্বপূর্ণ"।
এবং, অবশ্যই, যখন চাপের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কম করার এবং সফল হওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি করার কথা বলা হয়, তখন প্রায় সমস্ত গুরুরাই পূর্ব-বিকাশিত এবং পরিক্ষীত কৌশল দৃঢ়ভাবে মেনে চলার উপদেশ দিয়ে থাকেন, সংবেদনশীল সদ্ধান্তগুলিকে কম করতে বলেন, এবং অর্থের ব্যবস্থাপনা সম্মন্ধে ভুললে চলবে না।
ট্রেডিং-এর জন্য মানসিক প্রস্তুতির মূল্যায়ণ
একজন ট্রেডার হওয়ার জন্য মানসিকভাবে কতোটা প্রস্তুতির প্রয়োজন সেটা নির্ধারণ করার কি কোনো উপায় রয়েছে? অবশ্যই, রয়েছে। আসুন এইগুলির একটি তালিকা করা যাক এবং তারপরে এইগুলি কি এবং কিভাবে কাজ করে তার গভীরে যাওয়া যাবে। সুতরাং, ট্রেডিং-এর জন্য মানসিক প্রস্তুতির মূল্যায়ণ করার জন্য, নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি ব্যবহৃত হয়:
– সাক্ষাৎকার এবং সমীক্ষা। পেশাদারি ট্রেডারদের সাথে বা অর্থনৈতিক বাজারের মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞর সাথে ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার এবং পরামর্শ, সেইসাথে অর্থ, ঝুঁকি, এবং সিদ্ধান্ত-গ্রহণ সম্পর্কে আপনার মনোভার সম্মন্ধে প্রশ্নাবলী পূরণ করা, ট্রেডিং-এর জন্য আপনার মানসিক প্রস্তুতির মূল্যায়ণের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে। পেশাদাররা আপনার মানসিক প্রোফাইল থেকে আপনার শক্তি এবং দুর্বলতা চিহ্নিত করতে পারবেন।
– ঝুঁকি-বিদ্বেষ পরীক্ষা। সাইকোমেট্রিক পরীক্ষা করুন যা আপনার ঝুঁকির প্রবণতা নির্ধারণ রকতে সাহায্য করবে। এই পরীক্ষাগুলি আপনি যখন কোনো অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন তখন সম্ভাব্য ক্ষতি এবং উপার্জনের প্রতি আপনার প্রতিক্রিয়ার পরিমাপ করার জন্য করা হয়।
– ডেমো অ্যাকাউন্ট। ডেমো অ্যাকাউন্টে ট্রেডিং-এর অনুশীলন আপনাকে আপনার আবেগ পরিচালনা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং কোনো প্রকৃত অর্থনৈতিক ক্ষতি ছাড়াই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে।
– ট্রেডারের ডায়েরি। একটি ডায়েরি রাখুন যেখানে আপনি বিভিন্ন ট্রেডিং অবস্থায় আপনার আবেগ এবং প্রতিক্রিয়া লিখে রাখবেন যা আপনার মানসিক অবস্থার বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করবে। সময়ের সাথে, আপনি পুনরাবৃত্ত নিদর্শন চিহ্নিত করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় পরিবর্তনও করতে পারবেন।
– স্ট্রেস টেস্ট। কিছু ক্ষেত্রে, বাজারের চরম পরিস্থিতি অনুকরণের জন্য বিশেষ স্ট্রেস টেস্ট করা হয়ে থাকে। এটি আপনাকে উচ্চ-চাপের সময় আপনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেবেন সেটি চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।
ঝুঁকি-বিদ্বেষ পরীক্ষা
যেমনটা আগেই বর্ণনা করা হয়েছে, ঝুঁকি-বিদ্বেষ পরীক্ষার লক্ষ্য হল আপনার ঝুঁকির প্রবণতা পরিমাপ করা, বিশেষকরে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে। এই মূল্যবান টুলটি আপনার কর্মজীবনের শুরু দিকের খুবই উপকারী হয়ে উঠতে পারে। এখানে এই ধরণের পরীক্ষা বিস্তৃতরূপে বর্ণনা করা হয়েছে:
– পরীক্ষার প্রস্তুতি। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পূর্বে, আপনাকে সাধারনত নির্দেশাবলী প্রদান করা হয় এবং আপনার থেকে কি আশা করা হচ্ছে তা স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করা হয়। কখনও কখনও, আপনার অর্থনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং ঝুঁকি সম্মন্ধে বোঝাপড়ার জন্য প্রাথমিক সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মৌলিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
– প্রশ্নাবলী এবং দৃশ্যকল্প। এই পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে প্রশ্নাবলীর একটি সিরিজ অথবা বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চিত্রিত করে অনুমানমূলক দৃশ্যকল্প এবং বহুনির্বাচনী উত্তর প্রদান করা হয়। এখানে সম্ভাব্য প্রশাবলী কিছু উদাহরণ রয়েছে: অর্থের সাথে আপনার সম্পর্ককে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন? আপনি যদি লটারিতে বড় অর্থ জিতে যান তাহলে আপনি কি করবেন? আপনি আপনার সঞ্চয়ের কতোটা অর্থের ঝুঁকি নিতে পারবেন? আপনি সিদ্ধান্ত কি স্বজ্ঞাতভাবে, অবস্থার বিশ্লেষণ করে, অথবা কিছু উপদেশ নেওয়ার মাধ্যমে নিয়ে থাকেন?
– প্রতিক্রিয়ার মূল্যায়ন। প্রতিটি প্রশ্নের বা দৃশ্যকল্পের জন্য আপনার প্রতিক্রিয়াকে আপনার ঝুঁকির প্রবণতা পরিমাপের জন্য বিশ্লেষণ করা হয়। উত্তরগুলি প্রায়শই স্কেলের মাধ্যমে গ্রেড করা হয়, এবং একটি বিস্তৃত ঝুঁকি-বিদ্বেষ ফলাফল পাওয়ার জন্য চূড়ান্ত ফলাফলগুলিকে একত্রিত করা হয়।
– ফলাফলের বিশ্লেষণ এবং প্রতিক্রিয়া। পরীক্ষাটি সম্পূর্ণ করার পরে, বিশেষজ্ঞ ফলাফলের বিশ্লেষণ করেন। তারা আপনার উত্তরগুলির ব্যাখ্যাও করতে পারেন এবং আপনাকে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার সুপারিশও প্রদান করতে পারে এবং একজন ট্রেডার রূপে বেড়ে ওঠার পরবর্তী পদক্ষেপগুলিও সুপারিশ করতে পারে।
– পুনরায় পরীক্ষা। কিছু ক্ষেত্রে, পর্যায়ক্রমে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়ে থাকে, বিশেষকরে যদি আপনার জীবনে অথবা অর্থনৈতিক অবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়ে থাকে।
ঝুঁকি-বিদ্বেষ পরীক্ষা আপনার প্রয়োজনীয়তা এবং সংস্থানের উপর ভিত্তি করে, বিভিন্ন ফরম্যাটে এবং বিভিন্ন জায়গায় নেওয়া হতে পারে। অনলাইনে ঝুঁকির প্রবণতা মাপার জন্য বিনামূল্যের এবং অর্থ প্রদান করে বিভিন্ন সাইকোমেট্রিক পরীক্ষা উপলব্ধ রয়েছে। এইধরনের পরীক্ষা শুরু করার ক্ষেত্রে ভালো হতে পারে। বহু অর্থনৈতিক উপদেষ্টা, মনোবিজ্ঞানী, এবং কোচেরা বিস্তৃত আর্থিক পরিকল্পনার অংশরূপে ঝুঁকি-বিদ্বেষ পরীক্ষা করে থাকেন। এটি খুবই সাহায্যের হতে পারে যদি আপনি আরও ব্যক্তিগতকৃত পদ্ধতি পেতে চান এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পেতে চান, যারা আপনাকে পেশাগত সুপারিশগুলি প্রদান করতে পারবেন।
কিছু ইউনিভার্সিটি এবং বৈজ্ঞানিক সংস্থাগুলি অর্থনৈতিক মনোবিজ্ঞানের উপর গবেষণা করে থাকেন এবং তাদের রিসার্চ প্রজেক্টের অংশ হিসাবে ঝুঁকি-বিদ্বেষ পরীক্ষাও প্রদান করে থাকেন। আগে, এই পরীক্ষা বিশেষ শিক্ষামূলক সেমিনার বা ওয়েবনারের অংশ হিসাবে উপলব্ধ থাকতো। লক্ষ্য হল এটা নিশ্চিত করা যে পরীক্ষার জন্য যে ধরণের পদ্ধতি বা প্ল্যাটফর্মই আপনি বেছে নেন না কেন তার খ্যাতি ভালো হতে হবে এবং যেন ঝুঁকি-বিদ্বেষ পরিমাপের জন্য বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত পদ্ধতির প্রস্তাব করে।
ডেমো অ্যাকাউন্ট
নর্ড এফ এক্স ব্রোকারেজ কোম্পানি দ্বারা ডেমো অ্যাকাউন্টে ট্রেডিং প্রদান করা হয় যা মৌলিক দক্ষতা অর্জন করার অন্য ডিজাইন করা হয়েছে এবং এটি প্রকৃত ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মের সংঘটিত হয়ে থাকে কিন্তু ভার্চুয়াল অর্থের সাথে। এটি ব্যবহারকারীদের প্ল্যাটফর্মের ইন্টারফেস এবং কার্যকারিতা সম্মন্ধে অবগত, ট্রেডিং-এর অনুশীলন করতে, এবং বিভিন্ন কৌশল ও সূচক পরীক্ষা করতে সাহায্য করে থাকে।
ভার্চুয়াল অর্থের সাথে ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে ট্রেডারদের প্রতি সেই মানসিক চাপ থাকে না যা প্রকৃত ফান্ডের সাথে থাকে। যদিও, ডেমো অ্যাকাউন্টের দীর্ঘকালের জন্য অনুশীলন অবাস্তব প্রত্যাশার দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং ঝুঁকি প্রতি এটি অবহেলা করা হয়। সেইজন্য, এটি বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে ডেমো অ্যাকাউন্টে সফলতা কখনই প্রকৃত বাজারে সফলতার গ্যারেন্টি দেয় না।
ট্রেডারের ডায়েরি
ট্রেডারের ডায়েরি হল একটি টুল যা আপনার ট্রেডিং-এর কার্যকলাপ সংগঠিত করতে এবং বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। এটি ইলেকট্রনিকভাবেও বজায় রাখা সম্ভব, মনে করুন, একটি এক্সেল স্প্রেডশীট অথবা গুগল শীটের মাধ্যমে, অথবা প্রথাগত একটি কাগজের নোটবুকের মাধ্যমে। ডায়েরির মধ্যে সাধারণ বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে তারিখ, সময়, এবং পজিশন খোলা ও বন্ধের মূল্য, তাদের আকার, ট্রেডের দিকনির্দেশ, যে অ্যাসেট বা মুদ্রা জুড়িতে ট্রেড করা হয়েছে, স্টপ-লস অথবা টেক-প্রফিট-এর স্তর, এবং ট্রেড থেকে প্রাপ্ত লাভ অথবা ক্ষতি।
একটি ট্রেডের প্রবেশ করার কারণগুলি লেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেমন বাজার বা খবরের বিশ্লেষণ, সূচকের সিগনাল, এবং সেইসাথে, এটি থেকে বেড়িয়ে আসার কারণগুলিও লেখা গুরুত্বপূর্ণ। যখন পজিশন খোলা বা বন্ধ করা হয়েছিল তখন বাজারের অবস্থার বর্ণনা প্রদান করে এমন স্ক্রীনশট এবং চার্ট মূল্যবান হতে পারে। সেইসাথে, একটি ট্রেডের আগে, ট্রেডের সময়, এবং ট্রেডের পরে আপনার মানসিক অবস্থার বর্ণনাও উপকারী হতে পারে। যেকোনো অতিরিক্ত নোট যা আপনি যে ভুলগুলি করেছেন তার বর্ণনা দেয় এবং কি শিখেছেন তার বর্ণনা প্রদান করে সেগুলিও অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ হতে পারে।
এই ধরণের ডায়েরি শুধুমাত্র আপনার ট্রেডিং-এর কৌশলের অন্তর্দৃটিই প্রদান করে না বরং আপনার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা, শৃঙ্খলা, এবং বিভিন্ন বাজারের অবস্থার প্রতি মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়ার উপর আলোকপাতও করে। এই ডায়েরি নিয়মিত ব্যবহার করলে, বিশেষকরে প্রতিটি ট্রেডের পরে, ভবিষ্যতে একটি ভুলের পুনরাবৃত্তি থেকে আপনাকে রক্ষা করে। যদিও, অবশ্যই, এই এন্ট্রিগুলির কতো ঘন ঘন করা হচ্ছে সেটা বৃহৎরূপে আপনার ট্রেডিং-এর ধরণ –এর উপর নির্ভর করছে। যেখানে দীর্ঘ-কালীন অথবা মধ্য-কালীন ট্রেডিং-এর প্রতিটি ট্রেডের ডকুমেন্ট রাখা অনেক সোজা, ইন্ট্রাডে ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে এটি বেশ চ্যালেঞ্জপূর্ণ হয়ে ওঠে এবং স্ক্ল্যাল্পিং এবং পিপস ট্রেডিং-এর ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।
স্ট্রেস টেস্ট
ট্রেডারদের জন্য স্টেস টেস্ট হল বিশেষভাবে ডিজাইন করা দৃশ্যকল্প বা মডেল যা বাজারের চূড়ান্ত অবস্থায় ট্রেডারের প্রতিক্রিয়ার মূল্যায়ন করে যা ঘনিষ্ঠভাবে প্রকৃত-জীবনের অবস্থাকে তুলে ধরে। এই পরীক্ষাগুলি একজন ট্রেডারের কার্যকরভাবে ঝুঁকির ব্যবস্থাপনা করা এবং তীব্র বাহ্যিক চাপে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার পরিমাপ করে।
এই পরীক্ষাগুলির সময়ে, বাজারের চূড়ান্ত অবস্থার অনুকরণ করা হয়: অপ্রত্যাশিত মূল্যের তীব্র ওঠানামা, অস্থিরতায় পরিবর্তন, এবং অন্যান্য জটিল অবস্থাগুলি। এই সম্পূর্ণ অনুকরণের মধ্যে দিয়ে, ট্রেডার ক্রয়, বিক্রয়, অর্ডার প্রদান করা, এবং এই ধরণের সিদ্ধান্ত নয়ে থাকেন। পরীক্ষা পরে, সিদ্ধান্তগুলি, বজায় রাখা শৃঙ্খলার স্তর, চাপ সহনশীলতা, এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার কার্যকারিতার উপর ভিত্তি করে একটি বিশ্লেষণ করা হয়। এই ধরণের অনুশীলন চূড়ান্ত অবস্থার অধীনের আপনার যথাযতভাবে কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়, আপনার ট্রেডিং পদ্ধতির দূর্বলতা চিহ্নিত করতে সাহায্য করে, এবং, ফলস্বরূপ, প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে সাহায্য করে।
পরীক্ষার ফলাফলগুলির নির্ভরযোগ্যতা
তালিকাভুক্ত সমস্ত পদ্ধতির ত্রুটির ঝুঁকি কতোটা রয়েছে, এবং এইগুলি কতোটা নির্ভরযোগ্য? একজন নবীন ট্রেডার, যে সফলভাবে সমস্ত পরীক্ষায় সফলতা পেয়েছে, প্রকৃত অর্থের সাথে ট্রেড করার জন্য কি সত্যিই প্রস্তুত নয়?
সর্বপ্রথম, এটা অবশ্যই মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে প্রশ্নাবলী এবং মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা স্ব-সচেতনতা এবং উত্তরের সত্যতার উপর নির্ভর করে। এইগুলি কখনও কখনও একজন ব্যক্তির প্রকৃত মানসিক অবস্থা সঠিকভাবে প্রতিফলিত নাও করতে পারে। তাছাড়া, প্রকৃত ট্রেডিং-এর প্রায়শই উচ্চ মানসিক চাপ অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা সম্পূর্ণভাবে অনুকরণ করা সম্ভব নয়। কোনো নবীনের কাছেই সেই অভিজ্ঞতা থাকে না যা শুধুমাত্র অনুশীলন এবং সময়ের সাথে আসে। সফল পরীক্ষার ফলাফল তালে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের দিকেও নিয়ে যেতে পারে, যা ফলস্বরূপ আবেগপ্রবণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিকে হতে পারে, সম্ভাব্যরূপে যা উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এটা অবশ্যই চিহ্নিত করা গুরুত্বপূর্ণ যে অর্থনৈতিক বাজার অগণিত কারণ দ্বারা প্রভাবিত, যার মধ্যে রয়েছে ম্যাক্রোইকোনমিক স্ট্যাটিসটিক্স, রাজনৈতিক ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং এমনকি গন মনোবিজ্ঞান। এইগুলি পরীক্ষাতে বা অনুকরণগুলিতে সম্পূর্ণভাবে গণনা করা যায় না। সেহেতু, তালিকাভুক্ত পদ্ধতিগুলি স্ব-সচেতনতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য দরকারী টুল হতে পারে, কিন্তু এইগুলি প্রকৃত অভিজ্ঞতাকে প্রতিস্থাপন করতে পারেন না এবং ট্রেডিং-এর প্রস্তুতির ক্ষেত্রে অনেকগুলি কারণের একটি রূপে বিবেচনা করা উচিত।
ফিরে যান ফিরে যান